রাজশাহীর নয়টি উপজেলার প্রায় প্রতিটি ভূমি অফিসেই দালালদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে জমিজমা সংক্রান্ত কাজে আসা সাধারণ মানুষকে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। খাজনা, খারিজ ও নামজারির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হতে যেখানে মাসের পর মাস লেগে যাচ্ছে। সেখানে টাকা দিলেই নাকি অল্প সময়েই সমাধান মিলছে— এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার হরিহরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ঘিরে। স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন এই অফিসে দালাল গিয়াস ও শামীমের মাধ্যমেই বেশিরভাগ গ্রাহককে সেবা নিতে হয়। অফিসের সহায়ক মাহফুজুর রহমানও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল- ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শামীমা আক্তার প্রায়শই দালাল গিয়াসের মোটরসাইকেলে চড়ে মাঠপর্যায়ে জমির তদন্ত ও জরিপ করতে যান।
শামীমা আক্তার এই অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, ‘অনেক মৌজা সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা না থাকার কারণে তিনি গিয়াসের সাহায্য নেন।’
তবে সরকারি কর্মকর্তার এমন দালালের সঙ্গে চলাফেরা এলাকার মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালামের অভিযোগ, দালালদের দিয়ে টাকা উঠিয়ে তার একটি অংশ শামীমা আক্তার নেন। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পান না। ফলে ভবিষ্যতে জমি-সংক্রান্ত কাজে আরও হয়রানির আশঙ্কা তৈরি করছে।
দালাল গিয়াসও শামীমার সঙ্গে জমির তদন্তে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে দালাল শামীমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
যখন সেবাপ্রত্যাশীরা চরম ভোগান্তিতে থাকেন, তখনই কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সেবার মান বৃদ্ধির আশ্বাস শোনা যায়। পবা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদ হাসান ও মোহনপুরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়দা সুলতানা দুইজনেই জানিয়েছেন, সেবা সহজীকরণে কাজ চলছে।
তবে জোবায়দা সুলতানা একইসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন- মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কাকনহাট পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এই অতিরিক্ত চাপের কারণে দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে। প্রতিদিন তার কার্যালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে অসংখ্য সেবাপ্রত্যাশীকে।
রাজশাহীতে মোট ৪৬টি ভূমি অফিস রয়েছে- যার মধ্যে ১৯টিতে ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সার্ভার জটিলতাসহ নানা কারণে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষ জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান চাইতে এসব অফিসে ভিড় জমান।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মহিনুল হাসান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে সেবাপ্রত্যাশীরা প্রশ্ন তুলছেন, কবে এই দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে এবং সাধারণ মানুষ হয়রানিমুক্ত পরিবেশে তাদের প্রাপ্য সেবা পাবে।
কেকে/ এমএ