মাগুরার শালিখায় পাতিহাঁসের পাশাপাশি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রাজহাঁস পালন। মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ অর্থনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখায় হাঁসের রাজা খ্যাত রাজহাঁস এখন পালিত হচ্ছে প্রায় প্রতিটি ঘরে। ডিম, রাজের ছা এবং বড় রাজ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা ও রাস্তার পাশের ডোবা-নালা এবং নদীতে দলবদ্ধ রাজহাঁসের ক্যাক ক্যাক শব্দে মুখরিত পুরো এলাকা।
গ্রামের অধিকাংশ মেয়েরা বাড়িতে ছোট্ট খামার গড়ে রাজহাঁস পালন করে বাড়তি আয় করছেন। দুস্থ পরিবারের আর্থিক সংকট মোকাবিলাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে রাজহাঁস পালন। কথিত আছে, রাজহাঁস পবিত্রতা, আনুগত্য, ঐক্য এবং প্রেমের প্রতীক। সংগীতের দেবতা অ্যাপোলোর সঙ্গে যুক্ত। এটি রোমান্টিকতা, প্রেম এবং ভক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। যেকোনো ব্যক্তির জীবনে রাজহাঁস মানে হলো তার জীবনে একটি ঐশ্বরিক এবং শুভ সময় প্রবেশ করেছে।
প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় প্রায় ৪শ বছর আগে থেকে রাজহাঁস পালনের প্রচলন রয়েছ। প্রধানত মাংস উৎপাদনের জন্য রাজহাঁস পালন করা হতো। বর্তমানে মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রাজহাঁসের পালক দিয়ে গদি, লেপ-তোশক, কুশন তৈরি করা যায়। রাজহাঁসের বুক পিঠ এবং পেটের নরম পালকের চাহিদার কারণে রাজহাঁসের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতি বছরই শালিখাতে বাড়ছে রাজহাঁসের সংখ্যা।
সরেজমিনে উপজেলার গঙ্গারামপুর, বুনাগাতী, ধনেস্বরগাতী, শালিখা, শতখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির পাশের পুকুরে জাল দিয়ে ঘিরে রাজের শাবক পালন করছেন অনেকে। কিছু জায়গায় বাড়ির পার্শ্বেই খোয়াড় বানিয়ে পালন করা হচ্ছে রাজহাঁস। গ্রামের রাস্তায় রাজসিকভাবে রাজহাঁসের বিচরণ যেন জানান দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। উপজেলার ফটকী ও চিত্রা নদীর দুই পাশে ও পানিতে রাজহাঁস ঝাঁক জলাশয় থেকে খাদ্য খেয়ে তাদের খাদ্য চাহিদা মেটাচ্ছে। রাজহাঁস হচ্ছে একমাত্র প্রজাতী যা গরু-ছাগলের ন্যায় ঘাস-লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে।
সাধারণত রাজহাঁস তার প্রয়োজনীয় খাদ্যের অর্ধেকের বেশি খাদ্য ঘাস খেয়ে পূরণ করে থাকে। এটি পালন করার জন্য তৃণময় নিম্নভূমিবিশিষ্ট এলাকা প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এ জন্য তৃণময় এলাকায় রাজহাঁস পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়। দেশি জাতের রাজহাঁস সারা বছরে প্রায় ২০-২৫টি ডিম দিয়ে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হলো এ ডিমের আকার এত বড় যে, তা দেশি হাঁসের চেয়ে আড়াইগুণ এবং মুরগির ডিমের তুলনায় প্রায় ৪গুণ বড়। বড় রাজহাঁস ৪৫০-৫০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজহাঁসের বাচ্চা ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। রাজহাঁস একটি পরিবারের জীবন ও জীবিকার অন্যতম আয়ের উৎস হতে পারে।
উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের রত্না বিশ্বাস বলেন, তিনি সবসময় ৩০ টা রাজহাঁস পালন করেন। পরিবারের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে হাঁস বিক্রির টাকা দিয়েই তিনি হাঁসের খাবার কেনেন ও ছেলে-মেয়েদের হাত খরচ চালান।
আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের শেফালী খাতুন জানান- স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেদের সঙ্গে থাকেন। পালার জন্য দুইটা হাঁস কিনেন। প্রথমে ১০টি ডিম পাড়ে। ১০টি ডিম বসিয়ে বাচ্চা তোলেন। দুইটা হাঁস থেকে বর্তমানে তার ২৫ টি রাজহাঁস আছে। প্রতিটি হাঁস ৪-৫ কেজি পর্যন্ত হয়। সারা দিন বাগানে-বিলে হাঁস চরান। এতে বাড়তি খাবারের তেমন প্রয়োজন হয় না। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে হাঁস বিক্রির টাকা দিয়েই ওষুধপথ্য কেনেন তিনি।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহারিন সুলতানা বলেন, রাজহাঁসের মাংস সুস্বাদু হওয়ায় এবং রাজহাঁস পালন লাভজনক হওয়ায় উপজেলায় ওভারল এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভয় শুধু ডাক প্লেগ রোগ নিয়ে তবে সময় মতো ভ্যাকসিন দিলে আর কোনো সমস্যা হয় না। ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা প্রতিনিয়ত খামারিদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
কেকে/ এমএস