ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-ফেরীঘাট টু ঢাকা আঞ্চলিক সড়কসহ পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে নির্মাণাধীন ভবনের সরঞ্জাম রাখায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহন ও পথচারীরা। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে এমনভাবে নির্মাণাধীন ভবনের ব্যবহৃত ইট, বালু, খোয়া রাখা হচ্ছে যেন দেখে বোঝার উপায় নেই সেগুলো সড়ক নাকি সরঞ্জাম রাখার মাঠ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।
স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি দেখেও না দেখার মতো করে চলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার ও বুধবার (২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর) বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ও পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক দখল করে নির্মাণাধীন ভবনের সরঞ্জাম রাখায় চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। এসব কারণে শহরজুড়ে দিন দিন যানজটসহ নানা জনভোগান্তি বেড়েই চলছে। এছাড়া ঘটছে ছোট বড় অসংখ্য দুর্ঘটনাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল সড়কের অন্তত ৮-১০টি এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র ইট-পাথর-বালু ফেলে রাখছেন ভবনমালিকেরা।
মঙ্গলবার রাত ৮ টায় আইয়ুবপুর ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝে ইটের স্তুপ। প্রায় ২/৩ কি.মি. যানজট। বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও নারীরা হাস ফাঁস করছেন। ঢাকা থেকে কড়িকান্দি ফেরীঘাট হয়ে বাঁশগাড়ি মোড়ে যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি।
বাঞ্ছারামপুর পৌর এলাকার হাইস্কুল রোড। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নসহ পৌরসভার ৪ এবং ৫ নং ওয়ার্ডের জনগণ এই সড়কে যাতায়াত করেন।
অনেকেই সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্যও এ সড়ক ব্যবহার করেন। ওই সড়কের পাশেই রয়েছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ সড়কের দুই পাশে বালু আর ইটের খোয়ার স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও পথচারীরা।
এছাড়া পৌর শহরের মেয়র বিজ্র থেকে ডিগ্রি কলেজ মোড় পর্যন্ত সড়কের ২টি জায়গায় সড়কে নির্মাণসামগ্রী ও বাঁশ রেখে সড়ক দখল হচ্ছে। অথচ এই সড়কটিকেই শহরের প্রাণ বলা হয়।
একই চিত্র দেখা গেছে ছয়ফুল্লাকান্দি সড়কে বালু রেখে ব্যবসা করতো। রুপসদী ইউনিয়নে কয়েকটি স্থানে বাড়ি তৈরির নির্মাণ সামগ্রী রেখে সরকারি রাস্তা দখল করায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ছলিমাবাদ ইউনিয়নের অবস্থা আরো খারাপ। যে যেভাবে পারছেন, সড়কে নির্মাণ সামগ্রী রেখে বাড়ির কাজ করছেন আবার কেউ বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করছেন।
বাঞ্ছারামপুর পৌর বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে দিনের পর দিন সড়কের বিভিন্ন এমন ভোগান্তির চিত্র দেখা গেলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ হয় না। যেন এই শহরকে দেখার কেউ নেই।
মোটরসাইকেল আরোহী জামাল হোসেন বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই সড়কের ওপর পাথর, বালু, ইট ও কংক্রিট রেখে ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। যানজট লেগেই থাকে।
রিকশাচালক কালাম মিয়া বলেন, সড়কের দখল করে দিনভর কাজ করছেন বাড়ির মালিকেরা। এক জায়গায় নয় শহরের বিভিন্ন সড়কে এই চিত্র।
বাঞ্ছারামপুর এস এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাই। রাস্তার দুই পাশে বালু, ইট, ইটের খোয়া ও পাথরের স্তূপ থাকায় পথ চলতে খুব বেগ পেতে হয়। স্কুলের পাশে বহুদিন যাবৎ নির্মাণ সামগ্রী ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন রশিদ বলেন, ‘এই শহরে চলাচলের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি নজর দেওয়া।’
কয়েকজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাসের পর মাস সড়কের পাশে এমনকি সড়কের মাঝ বরাবর ইট, বালু, খোয়া, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রেখে বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। এ বিষয়টি জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভায় বসবাসকারী জনৈক ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, "যাদের রাজনৈতিক পরিচয় বা টাকা আছে, তাদের আমরা প্রভাবশালী বা হেডামওয়ালা বলি।যাদের হেডাম (ক্ষমতা) আছে, তারাই সড়কে নির্মাণ সামগ্রী রাখে। সাধারণ মানুষ সেখানে কিছু রাখার সাহসই পাবে না।"
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস আরা এবং বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার প্রশাসক ও এসিল্যান্ড রবিউল হাসান ভূইয়া আলাদাভাবে বলেন, "যারা সড়ক দখল করে রেখেছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে খুব দ্রুতই নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। যদি আদেশ না মানে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷"
কেকে/এআর