মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশের কনডেনসেট পাইপলাইনে দুর্বৃত্তদের অবৈধ ছিদ্রের কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ২ নম্বর ভূনবীর ইউনিয়নের শাসন উত্তর ইলাম গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
দগ্ধরা হলেন, বশির মিয়া, তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার পারভীন ও তাদের ছেলে রেজোয়ান মিয়া। গুরুতর অবস্থায় তারা ঢাকার জাতীয় বার্ণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইউপি সদস্য সালেক মিয়া জানান, মঙ্গলবার বিকেলে বাতাসে তেলের গন্ধ পাওয়া গেলে বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়। পরে শেভরনের কর্মীরা সেখানে গিয়ে পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু রাত ৯টার দিকে বিকট শব্দের সঙ্গে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয়দের জানায়, পাইপ থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল পানিতে মিশে যায় এবং তা ভেসে হাওরের দিকে চলে যায়। এতে ছড়ার মাছ মরে ভেঁসে উঠলে অনেকে মাছ ধরতে যান। ওই সময় পানির ওপর ভাসমান তেলে আগুন ধরে গেলে একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মৌমিতা জানান, বশির মিয়া ও তার ছেলে রেজোয়ান অগ্নিদ্বগ্ধ অবস্থায় আসলে তাদের দ্রুত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল থেকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে বলে শুনেছি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা পেট্টো বাংলা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন ওই এলাকায় মাটির নিচ দিয়ে পাশাপাশি চলে গেছে সিলেটের হরিপুর হতে রশিদপুর হয়ে জাতীয় গ্রিডের গ্যাস ও তেলের পাইপ লাইন। এরমধ্যে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে ওই এলাকায় তেলের লাইন থেকে তেল লিক হতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে দায়িত্বরত পাহারাদারকে খবর দিলে তারা এসে দেখে দু’টি পয়েন্টে তেলের প্রবাহ বন্ধ করত লক টানেন। কিন্তু এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে তেল চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর হঠাৎ আগুন ধরে যায় তেলের লাইনে। এরপর আগুন প্রায় এক কিলোমিটার ব্যবধানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর শ্রীমঙ্গল স্টেশনের কর্মকর্তা সোলাইমান আকনজি বলেন, আমাদের প্রথমে বলা হয়েছিল বিদ্যুতের তারে আগুন লেগেছে। পরে গিয়ে দেখি তেল থেকে আগুন লেগেছে। পাইপলাইনে অতিরিক্ত তেলের চাপ থাকায় শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছিল। পরে ফোম ব্যবহার করে আমাদের দু’টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
শেভরন বাংলাদেশের মিডিয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক শেখ জাহিদুর রহমান দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, দুর্বৃত্তরা পাইপলাইনে অবৈধভাবে ট্যাপিং করে। এতে কনডেনসেটে তেল ছড়িয়ে পড়লে রাতে আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করি। পরে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এ ঘটনায় কোম্পানির গ্যাস উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়েনি। তদন্ত চলমান রয়েছে, নতুন কোনো তথ্য পেলে পরবর্তীতে জানানো হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো গেছে। আগুনে দগ্ধদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত শেষে জানানো হবে।
কেকে/ আরআই