অনেকের মতো তিনিও সিনেমায় পা রাখেন নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। চঞ্চল দৃষ্টি, স্নিগ্ধ মুখাবয়ব-নায়িকা হওয়ার সব উপাদানই ছিল তার ভেতর। কিন্তু ভাগ্য তাকে নিয়ে যায় ভিন্ন পথে। পরিচালকরা দ্রুত বুঝতে পারেন তার অভিব্যক্তি, সংলাপ বলার ভঙ্গি আর শরীরী ভাষা একেবারেই খল চরিত্রের জন্য উপযুক্ত। আর সেখানেই শুরু হয় রিনা খানের নতুন যাত্রা।
বাংলাদেশি সিনেমায় এক সময় খলনায়ক-খলনায়িকাদের সমান গুরুত্ব দেওয়া হতো। নায়ক-নায়িকার প্রেমের গল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলতে তাদের উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য। রিনা খান সেই জায়গাটা পূর্ণ করেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে। তার কণ্ঠের দৃঢ়তা, চোখের দৃষ্টি, রাগ-অভিমান আর নিষ্ঠুরতার অভিনয়-সব মিলিয়ে দর্শকরা তাকে ভালোবেসেই ঘৃণা করত। খলনায়িকা হিসেবেই তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া।
রিনা খানকে শুধু খলনায়িকা বললে তার শিল্পীসত্তাকে ছোট করে দেখা হবে। কারণ তিনি খলচরিত্রের ভেতরেও বৈচিত্র্য এনেছিলেন। কখনো ছিলেন নির্দয় গ্রাম্য মহাজন, কখনো বা প্রতারণার ফাঁদে ফেলা শহুরে রমণী। আবার কখনো শাশুড়ি হয়ে নায়িকার জীবন দুর্বিষহ করতেন। প্রতিটি চরিত্রে তিনি নিজেকে এমনভাবে মিশিয়ে দিতেন যে দর্শকরা তাকে বাস্তব মনে করত।
সিনেমার পর্দায় তিনি ছিলেন ভয়ংকর, কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ উল্টো। সহকর্মীরা বলেন, রিনা খান ছিলেন হাসিখুশি, আন্তরিক ও সাহায্যপ্রবণ। শুটিং স্পটে তিনি সহশিল্পীদের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তবে খলচরিত্রে এতটাই সফল ছিলেন যে, সাধারণ দর্শকরা অনেক সময় বাস্তবেও তাকে ভয় পেতেন। এটাই ছিল তার অভিনয়ের শক্তি।
৮০ ও ৯০ দশকের বাংলা সিনেমায় রিনা খানের উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য। তখনকার প্রায় সব জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকার বিপরীতে তাকে দেখা গেছে। একের পর এক হিট সিনেমায় তার অভিনয় চলচ্চিত্রকে দিয়েছে প্রাণ, দিয়েছে উত্তেজনা। বলা যায়, খলনায়িকার দাপট যে কতটা হতে পারে, তা তিনি প্রমাণ করেছিলেন নিজের ক্যারিয়ারে।
বর্তমানে বাংলা সিনেমার ধারা বদলেছে। খলনায়িকার জন্য নির্দিষ্ট আলাদা চরিত্র এখন কম দেখা যায়। কিন্তু নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীরা যখন চরিত্রে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেন, তখন রিনা খানের নাম তাদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, নায়িকা না হয়েও একজন নারী অভিনয়শিল্পী চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি হয়ে উঠতে পারেন।
সেলিনা সুলতানা থেকে রিনা খানে তার রূপান্তর শুধু নামের নয় বরং এক শিল্পীর সাহসী যাত্রার কাহিনি। চলচ্চিত্রে তার অবদান চিরকালই আলোচনায় থাকবে এবং দর্শকরা বারবার ফিরে যাবে সেই খলনায়িকার কাছে, যিনি খলনায়িকার আসনকে এক অনন্য মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছিলেন।
কেকে/ আরআই