কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের দৈয়ারা গ্রাম এখন ‘দোলনার গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রায় আড়াই হাজার কারিগর প্রতিদিন দোলনা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর মধ্যে দুই হাজারেরও বেশি নারী গৃহস্থালির কাজ শেষে পরিবার-অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
দোলনা তৈরির কাজটি মূলত পরিবারভিত্তিক। মহাজনরা কাঁচামাল কারিগরদের ঘরে পৌঁছে দেন, আর পরিবারের সবাই মিলে দোলনা তৈরি করেন। প্রতিদিন একটি বড় দোলনা বানালে একজন কারিগর পান ৬০ টাকা, ছোট দোলনার জন্য ৫০ টাকা। বহু পরিবার দিনে গড়ে ৪-৫টি বড় দোলনা বানাতে সক্ষম হয়। এভাবে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখছেন।
দৈয়ারা গ্রামের প্রায় ১৫০ মালিক পরিবারের অধীনে এ শিল্প গড়ে উঠলেও এর বিস্তার ঘটেছে আশপাশের গান্দ্রা, মানিক্কা তেইল্লা, বাবুটিপাড়া, পাহাড়পুর গ্রামেও। এমনকি চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বর ও দেবিদ্বার উপজেলার চাটলী গ্রামের বহু বেকার যুবক-যুবতী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মসংস্থান পাচ্ছেন।
দেশি-বিদেশি দোলনার ভিড়ে বাঁশ ও সুতো দিয়ে তৈরি মুরাদনগরের দোলনা ক্রেতাদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। দাম সাশ্রয়ী, টেকসই ও ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ঘরেই জায়গা করে নিয়েছে এ দোলনা।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মুরাদনগরের দোলনা এখন বাজারজাত হচ্ছে দেশের ৬০ জেলায়। রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারেও স্থান পাচ্ছে এ দোলনা। এমনকি সিলেটের বিশ্বনাথ এলাকার লন্ডনি নারীদের কাছেও এটি পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এই হস্তশিল্প গ্রামীণ অর্থনীতিকে যেমন সমৃদ্ধ করছে, তেমনি কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনাও সৃষ্টি করছে। মুরাদনগরের দোলনা যেন জীবন্ত প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের সেই চিরন্তন ছন্দ- ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
কেকে/ এমএ