সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খেত খামার
মৌলভীবাজারে গোলমরিচ চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা
মো. এহসানুল হক, মৌলভীবাজার
প্রকাশ: বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:১৪ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

চা বাগানে সারি সারি গাছের সঙ্গে পেচানো লতা। দেখলে মনে হয় পানের পাতা। আসলে তা গোল মরিচের গাছ। এমন দৃশ্য দেখা গেছে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে। জেলার শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কমলগঞ্জ, বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে সাথি ফসল হিসেবে গোলমরিচ সীমিত পরিসরে উৎপাদন হচ্ছে।

চা বাগানের জন্য অত্যাবশ্যক ছায়াদানকারী বৃক্ষ। সেই বৃক্ষকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে গোলমরিচের লতা। মাংসসহ অনেক খাবারে স্বাদ বাড়াতে রান্নায় গুরুর্ত্বর্পূণ উপকরণ হিসেবে গোলমরিচের ব্যবহার রয়েছে। দেশে এর চাহিদার প্রায় পুরোটাই পূরণ হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। তবে মৌলভীবাজারে রয়েছে এই কৃষিপণ্য গোলমরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে শ্রীমঙ্গল ও রাজনগর উপজেলায়। 

সরেজমিন শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে—পান গাছের মতো অন্যান্য বড় গাছকে আকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে গোলমরিচের চাষ। উপজেলার হরিনছড়া, কালিঘাট, রাজঘাট, খেজুরি, জাগছড়া, হোসেনাবাদ এমআরখানসহ বিভিন্ন চা বাগনের ভেতরে সবুজ পাতার ফাকে ফাকে গোলমরিচের প্রচুর গাছ চোখে পড়েছে। হরিণছড়া চা বাগানে সবচেয়ে বেশি গোল মরিচের চাষ হয়েছে। এছাড়া রাধানগর ও মহাজেরাবাদ এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। 

রাজনগর চা বাগানের বাংলোয় এলাকায়ও প্রচুর গাছ রয়েছে গোল মরিচের। রাজনগর চা বাগানের কর্মকর্তারা জানান, তারা প্রায় ২৫ বছর ধরে বাগানের বাংলো এলাকায় গোলমরিচের চাষ করছেন। এখান থেকে প্রতিবছর প্রায় দেড়-দুই মণ গোলমরিচ বিক্রি হয়। তাদের বাগানে গোলমরিচের চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলেও তারা জানান। 

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়— শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বেশকিছু চা বাগানে প্রায় ১০০ হেক্টর এবং গ্রাম ও পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে আরও ৫০ হেক্টর জমিতে গোলমরিচের চাষ হচ্ছে। 

রাজনগর চা বাগানের শ্রমিক পার্থ মন্ডল বলেন, গোলমরিচের লতাগুলো যে কোনো গাছের সঙ্গে পেচিয়ে দিলেই হয়। আগস্ট থেকে ফল আসতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি মাসে পরিণত হয়। এ সময় পাকা গোলমরিচ সংগ্রহ করা হয়। 

শ্রীমঙ্গলের হরিণছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিকাশ সিংহ জানান, আমাদের চা বাগানের সেকশনের ভেতরে প্রায় ২০ বছর আগে লাগানো বেশ কিছু গোলমরিচ গাছ রয়েছে। শ্রমিকরাই এসব গাছের দেখাশোনা করেন। গাছগুলোতে ফলনও আসে, তবে বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করা হয় না। গাছগুলো অনেক বড় এবং দেখতেও বেশ চমৎকার। 

পাইকারি মসলার ব্যবসায়ী তাপস দেব জানান, স্থানীয় কিছু চাষি আমাদের কাছে গোলমরিচ বিক্রি করতে আসে, তবে পরিমাণ খুবই কম। আমাদের দোকানে বিক্রি হওয়া গোলমরিচের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা। দেশে যি গোলমরিচ চাষ ব্যাপক হতো তাহলে আমরা কম দামে কিনতে পারতাম, বাজারেও দাম কমত। বর্তমানে প্রতি কেজি কালো গোলমরিচ এক হাজার দুইশ টাকা এবং সাদা গোলমরিচ এক হাজার ছয়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও রাজনগর উপজেলায় গোলমরিচ চাষের প্রদর্শনী প্রকল্প করা হয়েছিল। লতানো গোলমরিচ গাছে লম্বা গুচ্ছে ছোট হলুদ রঙের ফুল ফোটে এবং ফল আসে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফল লাল হয়। তখন সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে চার-পাঁচ কেজি গোলমরিচ সংগ্রহ করা যায়। গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর ফলগুলো গুচ্ছ থেকে আলাদা করে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করতে হয়। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর তা বাজারজাত বা খাওয়ার উপযুক্ত হয়। পুষ্টিবিদরা বলেন, উৎকৃষ্ট এক প্রকারের ভেষজ গোলমরিচ। শারীরিক নানান জরাব্যাধি দূরীকরণে এর গুণাগুণ অনন্য। 

মৌলভীবাজারের চা বাগান ও পাহাড়ি এলাকায় গোলমরিচের চাষের উপযোগী পরিবেশ ও উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও বাণিজ্যিক চাষাবাদে কৃষি বিভাগের নেই কোনো উদ্যোগ। স্থানীয় চা বাগান ও কিছু পাহাড়ি জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে গোলমরিচের গাছ দেখা গেলেও এর ফলন মূলত নিজেদের প্রয়োজন বা সীমিতভাবে বিক্রয়ের জন্য। অথচ এই অল্প চাষেও ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা এবং উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টায় মৌলভীবাজারে গোলমরিচ হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকাগুলোর মাটি গেলমরিচ চাষের জন্য উপযোগী। ইতোমধ্যে প্রায় দুই হেক্টর জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে গোলমরিচের চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে মহাজেরাবাদসহ দশটি জায়গায় চারা রোপণ করেছি। কেউ চাষ করতে আগ্রহী হলে আমরা পরামর্শ ও সহযোগিতা করবো।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, এ জেলার আবহাওয়া ও মাটি মসলাজাতীয় ফসল চাষের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। জেলার শ্রীমঙ্গল রাজনগর, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার চা বাগানগুলোতে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে গোলমরিচের চাষাবাদ হচ্ছে। এছাড়াও গ্রাম ও পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে আরও ৫০হেক্টর জমিতে গোলমরিচের চাষ হচ্ছে। যেসব চা বাগানে গোল মরিচের চাষ হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। চাষে কেউ আগ্রহী হলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  মৌলভীবাজার   গোলমরিচ চাষ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

খেত খামার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close