দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিটি প্যানেলের প্রার্থীরাই চালাচ্ছেন জোর প্রচার-প্রচারণা। এদিকে, প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না প্রার্থীরা। আচরণবিধি উপেক্ষা করেই ক্যাম্পাসে ব্যানার প্রদর্শন, বিভিন্ন হলে পোস্টারিং, বহিরাগতদের সমাগম ঘটানো সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তায় প্রচারণার কাজে নানা ধরনের অনিয়ম তৈরি হয়েছে। তদারকি এবং জবাবদিহিতার অভাবে প্রার্থীরা হরহামেশাই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। অন্যদিকে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে।
এদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোন ধরণের কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। প্রশাসন যেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রার্থীরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করছেন। তবে এখানেও মানা হচ্ছে না আচরণবিধি। অভিযোগ উঠেছে, কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদে এক স্বাস্থ্য সম্পাদক পদপ্রার্থী তার লিফলেটের সঙ্গে একটি করে সাবান বিতরণ করেছেন। আবার নির্বাচনী পোস্টারের নির্ধারিত আকারের থেকে বড় ছাপানো হয়েছে একাধিক প্রার্থীর।
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক স্থাপিত বোর্ডের বাইরে একাধিক প্রার্থীকে লিফলেট এবং পোস্টার স্থাপন করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে দোকানের ফ্রিজের সামনের গ্লাস, হলের নাইট গার্ডের বসার টেবিলে এবং রিকশার পেছনেও লিফলেট স্থাপন করেছেন অনেক প্রার্থী। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে প্রচারণায় প্রতি প্রার্থীর ১০ থেকে ২০ হাজার লিফলেট ছাপানো হয়েছে, যার ব্যয় প্রায় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
আবার একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহিরাগতদের প্রচারণা কাজে যুক্ত করানোর অভিযোগ উঠেছে। অনেক প্রার্থীই প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও সমর্থিতদের খাবার ও চা-নাস্তার পেছনে ৫-১০ হাজার টাকা ব্যয় করছেন। অনেকের এই ব্যয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে, এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠনের পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের এক সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থীর লিফলেটে ব্যঙ্গচিত্র এবং অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
জাকসুর নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের অংশগ্রহণ বা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। প্রচারণায় কোনো বহিরাগত ব্যক্তি থাকতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্থাপিত ও নির্ধারিত বোর্ডে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল প্রচার/স্থাপন করতে পারবেন। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টার বা ব্যানারে প্রার্থী তার নিজের ছবি ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টারের ছবিসহ আয়তন দৈর্ঘ্য ৪০ (চল্লিশ) সেন্টিমিটার প্রস্থ ৩০ (ত্রিশ) সেন্টিমিটারের অধিক হতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারণার খরচ বাবদ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হল সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ ৪,০০০/- (চার হাজার) টাকা এবং কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা ব্যয় করতে পারবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি এবং অবগত আছি। সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা এবং পর্যালোচনা করেছি। আমরা নীরব রয়েছি এ কথাটি সত্য নয়, নির্বাচন কমিশনে লোক সংখ্যা কম তাই প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করছি। একটি আনুষ্ঠানিক মিটিংয়ের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাকসু নির্বাচন।
কেকে/ আরআই