কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাই এক ভয়াবহ ডাকাতির চেষ্টা চালাতে গিয়ে স্থানীয় জনতার হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছে পাঁচ ডাকাত সদস্য।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচর এলাকায় আবুল হাশেম মাস্টারের বাড়িতে সংঘটিত এ ঘটনায় ডাকাতদের আচরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
ঘটনার দিন বিকালে সবুজ নামের এক ব্যক্তি ভাড়াটে সেজে হাশেম মাস্টারের বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিতে আসে। বাসার বিভিন্ন অংশ খুটিয়ে দেখার পর সে রাতে ফোনে জানায়, পরদিন ভাড়ায় উঠতে চায় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়েই আসবে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে সকালে আসতে বলা হয়।
কিন্তু রাত গড়িয়ে ভোর হওয়ার আগেই, অর্থাৎ রাত ২টার দিকে, কেচিগেট ও দোতলার দরজার লক ভেঙে ৮-১০ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাতদল বাড়িতে হানা দেয়। অস্ত্রের মুখে তারা পুরো পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। প্রথমেই একজনের গলা থেকে দেড় ভরি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর লুট করে আরো দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৪২ হাজার টাকা এবং একটি মূল্যবান মোবাইল ফোন।
আবুল হাশেম মাস্টারের ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, সবুজ নামের লোকটা বিকালে ভাড়াটে সেজে বাসা দেখতে এসেছিল। রাতে বাসার প্রতিটি অংশ যেন মুখস্থ করে তাদের দল নিয়ে আসে। এমন হিংস্র আচরণ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
গণপিটুনির শিকার ডাকাতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই পাটধা কাঠালিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. সেলিম মিয়া, করিমগঞ্জ উপজেলার চরকুরুমসি গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুর রহমান, নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার বালাপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মো. আসলাম, একই উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের বাছেরের ছেলে সবুজ ও শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের দিরুল ইসলামের ছেলে আল আমিন মিয়া।
আহত ডাকাতদের প্রথমে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মফিজুর রহমান জানান, একজনকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে, একজনকে রাখা হয়েছে অবজারভেশনে এবং বাকিদের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এই ঘটনায় এলাকাবাসীর সাহসিকতা ও সচেতনতা আবারও প্রমাণ করল একতাই শক্তি। অপরাধীরা যতই ছলচাতুরী করুক, জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তাদের কোনো ছাড় নেই। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সজাগ দৃষ্টি ও সক্রিয় ভূমিকা থাকলে অপরাধীরা কখনোই নিরাপদে থাকতে পারবে না। সাদুল্লারচরের মতো প্রতিটি এলাকায় এমন সচেতন প্রতিরোধই হোক ডাকাতি প্রতিরোধের আদর্শ উদাহরণ।
কেকে/এএস