শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫,
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে      গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট      ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ : তথ্য উপদেষ্টা      যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি      শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল      ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক      বাংলাদেশকে আলাদা কোনো শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র : প্রেস সচিব      
দেশজুড়ে
ছোট ফেনী নদীর পাড়বাসীদের কান্না কেউ দেখে না
মো. হাবিবুল ইসলাম রিয়াদ, সোনাগাজী (ফেনী)
প্রকাশ: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫, ১২:০৭ পিএম আপডেট: ২৮.০৭.২০২৫ ১২:৫২ পিএম
ছবি : প্রতিনিধি

ছবি : প্রতিনিধি

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ছোট ফেনী নদীর পাড়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে বিভীষিকাময় সময়। প্রতিদিন ভাঙছে নদীর পাড়, বিলীন হচ্ছে, ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান, কৃষি জমিসহ জীবনের সবকিছু। অথচ এসব মানুষের দীর্ঘশ্বাস, কান্না, আর্তনাদ যেন কেউ শুনছে না। কেউ দেখছে না।

২৪ এর বন্যার পানির প্রভাবে মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর থেকে ছোট ফেনী নদীর দুপাশে অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাঙন দেখা দেয়। চর মজলিশপুর, বগাদানা, চরদরবেশ, চর চান্দিয়া চর পারবতি, চর হাজারী ও মুছাপুর ইউনিয়নের নদীর পাড়ের অংশে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের বসবাসরত ২০ হাজারের অধিক পরিবার। শতশত  পরিবারের সহায়সম্পদ ইতোমধ্যে  নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রোববার ছোট ফেনী নদী সেতু, ইতালি মার্কেট তালতলা এলাকা, কাজির হাটসংলগ্ন বাঁশ বাজার এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাভাবিক জোয়ারে লোনাপানি প্রবল স্রোতে লোকালয়ে ঢুকতে। এতে করে নদীর ২ পাশে ভাঙতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, অস্বাভাবিক জোয়ার ভাটার কারণে ভাঙছে পাড়সহ পাড়ে থাকা পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি। এতে করে পরিবার গুলো চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন।

সাইয়েদপুর এলাকার মো. হানিফ নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ঐ দেখছেন এটি আমার বাড়ি। নামাজ পড়ে নদীর কাছে আসলাম জোয়ারের কী অবস্থা দেখতে! গতকাল ঠিক এ সময় (দুপুর) খাওয়ার পূর্ব মহূর্তে যেভাবে জোয়ার এসেছে দুপুরের খাওয়ার খেতে পারি নাই। আজও এমন হয় কিনা ভয়ে দেখতে আসলাম। মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ করা সময়ের দাবি। অন্তত মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণের আগে যদি বাঁকা নদী সোজাও করে দেয় তাহলে অন্তত কিছুটা হলেও একটু রক্ষা পেতাম। কে শুনে আমাদের কথা! না শুনছে, সমাজ, রাষ্ট্র-সরকার।

স্থানীয় ওয়ালী-আল হায়দারিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, মুছাপুর ক্লোজারের পুনঃনির্মাণ দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকায় ছোট ফেনী নদীর উপকূলে বসবাসরত হাজারো মানুষ আজ ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিদিনই নদীভাঙনের মুখে পড়ছে তাদের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। নদীর ধারে বসবাসরত গরিব কৃষকদের বহু জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেসব জমি তারা বর্গা নিয়ে চাষ করতেন, এখন সেগুলো হারিয়ে জীবিকা নির্বাহে চরম সংকটে পড়েছেন।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো নদীঘেঁষা এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং সেখানকার শিক্ষার্থীরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। জোর দাবি জানাচ্ছি বিলম্ব না করে অতিদ্রুত মুছাপুর ক্লোজারের পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হোক।

এছাড়া লোনাপানি যদি কৃষি জমিতে ঢুকছে এতেকরে কৃষির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায় এলাকার কৃষকরা জমি গুলো ২-৩ ফসলি। এখানে আউশ, আমন পরবর্তী তরমুজ সহ নানা রবিশস্য চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। এ লোনা পানির কারণে জমিগুলো চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না।

উপজেলা সেচ্ছা সেবক দলের আহবায়ক আবু বক্কর ছিদ্দিক মারুফ, মুছাপুর রেগুলেটর ভাঙ্গার কারণে যে সমস্যাটা তৈরি হয়েছে আমারা এ দেশের প্রশাসন বা সরকার কর্তৃক মুছাপুর রেগুলেটর পুনঃনির্মাণে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা যেন দ্রুত নির্মাণ করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু মুসা রকি বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার প্রতিনিয়তই ভাঙছে। যেগুলো জরুরি ভিত্তিতে করা দরকার আমরা এগুলো চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে কাজীর হাট আউরার খীলের জলদাস পাড়া এলাকা ৩শ মিটারের একটি পাইলটিং প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। এটি জিও টিউবের কাজ। আমরা এখন পর্যন্ত ৮০ মিটার ডাম্পিং সম্পন্ন করেছি। আরো যে বাকি অংশগুলো আছে সেগুলো ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। এছাড়া নদী শাসন করা যায় কি না এ বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি।

জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন খোকন বলেন, প্রতিনিয়ত ভাঙনে সোনাগাজী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। যে হারে কৃষি জমি ভাঙছে এতে করে কৃষক তার শেষ অস্তিত্ব হারানোর শংকায় দিন পার করছে। অতিদ্রুত মুছাপুর ক্লোজারের পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হোক এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।

উপজেলা কৃষি অফিসার মাইন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর জোয়ার ভাটায় কৃষি জমি ভেঙে নদীতে বিলিন হচ্ছে।এবং জোয়ারের পানি নদী থেকে খাল হয়ে কৃষি জমিতে ঢুকে যায়। এতে করে কৃষি উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। মুছাপুর রেগুলেটর পুননির্মাণ হলে আশাকরি কৃষকের উৎপাদন ব্যহত হবে না। এতে করে কৃষি জমিও ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিগ্যান চাকমা জানান, আমি সোনাগাজীতে নতুন জয়েন্ট করেছি। চলতি মাসের ৩০ তারিখে ফেনী বাসীদের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটা সভা আছে। ঐখানে মুছাপুর রেগুলেটরের বিষয়টি উপস্থাপন করব। আশাকরি ওখান থেকেও একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (পুর) (ভারপ্রাপ্ত) অলোক দাশ বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর পুনঃনির্মাণ নিয়ে স্পেসিফিক কোন তথ্য আমার জানা নেই। এটি নিয়ে ঊর্ধ্বতনরা ভালো বলতে পারে। ভাঙন রোধে কিছু জুরুরি স্পট  চিহ্নিত করেছি। এগুলোতে টেকসই কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া এডিবির অর্থায়নে কিছু কাজ হবে। এ জন্য আমরা স্টিমেট তৈরি করছি।

কেকে/এএস

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শালিখায় বাড়ছে পাটকাঠির কদর
গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে
জামায়াতে এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি : সুমন
সাতক্ষীরায় সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু
গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট

সর্বাধিক পঠিত

‘হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি’
সুলতানগঞ্জকে যদি বন্দর করা যায় তাহলে করা হবে: ড. এম সাখাওয়াত
নওগাঁয় চক্ষু হাসপাতালের উদ্বোধন
‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close