* জমি ও দোকানঘর দখল করে জোরপূর্বক দলিল
* প্রতিকার না পেয়ে তারেক রহমানের কাছে বিচার দাবি
প্রথমে ক্লাবের নামে জমি ও দোকান দখল। তারপর সেই জমি ও দোকান ফেরত চাইতে গেলে ভুক্তভোগীর স্ত্রীকে দুই বিএনপি নেতার অনৈতিক প্রস্তাব। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চারমাস ধরে এলাকাছাড়া। এমন অভিযোগ করেছেন ভোলার লালমোহন পৌরশহরের শিল্পী ইসলাম নামের এক গৃহবধূ।
এই ঘটনায় ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের কাছে কয়েক দফা বিচার দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। এছাড়া ওই গৃহবধূ ২৩ জুলাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বিচার দাবি করেছেন।
গৃহবধু শিল্পী ইসলামের বাড়ি লালমোহন পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের ভাঙাপুল এলাকায়। তার স্বামীর নাম নুরুল ইসলাম। তারেক রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগে এবং পৃথক একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে গৃহবধূ শিল্পী ইসলাম অভিযোগ করেন, তার স্বামী নুরুল ইসলাম একজন সক্রিয় বিএনপি কর্মী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ভাঙাপুল এলাকায় নিজস্ব জমিতে একটি দোকানঘর নির্মাণ করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই তাদের দোকানটি বিএনপি সমর্থকদের ক্লাব করার কথা বলে জোরপূর্বক দখল করে নেয় লালমোহন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম বাবুল পঞ্চায়েত। গত ৫ মাস আগে তার স্বামী ও শশুরকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে দোকান ঘরের এক শতাংশ জমির দলিলও করে নেওয়া হয়। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নামে ওই জমি লিখে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ। জোরপূর্বক জমি লিখে নিলেও জমির প্রায় দশ লাখ টাকার বাজারমূল্য তাদের দেওয়া হয়নি।
শিল্পী ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি লালমোহন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম বাবুল পঞ্চায়েত ও লালমোহন উপজেলার প্রস্তাবিত যুবদল সভাপতি বাবুল পাটোয়ারীর কাছে গেলে তারা এই বিষয়ে চুপ থাকতে পরামর্শ দেন এবং পাশাপাশি জমির বাজারমূল্য পরিশোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তারা কোনো সমাধান না দেওয়ায় গৃহবধূ শিল্পী ইসলাম তার স্বামী নুরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় এসে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদেকে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি তাৎক্ষণিক লালমোহন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব বাবুল পঞ্চায়েতকে এই সমস্যা সমাধান করার নির্দেশ দেন এবং গৃহবধূকে বাবুল পঞ্চায়েতের কাছে যেতে বলেন।
গৃহবধূ জানান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের কাছে বিচার দেওয়ার কারণে তাদের প্রতি আরো ক্ষুব্ধ হন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব বাবুল পঞ্চায়েত এবং বাবুল পাটোয়ারী। মেজর হাফিজের নির্দেশে চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা থেকে লালমোহন গিয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাবুল পঞ্চায়েতের সঙ্গে দেখা করতে যান ওই গৃহবধূ। ভিডিও সাক্ষাতকারে শিল্পী ইসলাম অভিযোগ করেন, বাবুল পঞ্চায়েতের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি জমির আশা বাদ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি এসময় শিল্পী ইসলামকে বাজে ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলেন। একান্তে সময় দিলে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা দেওয়ারও প্রস্তাবও দেন। গৃহবধূ প্রতিবাদ করলে বাবুল পঞ্চায়েত তাকে বলেন, ‘তুমি কী ফেরেশতা হইছো। ফেরেশতা হলে ফেরেশতার মতো থাকো। আমাগো কাছে সহযোগিতা পাইবা না।’
শিল্পী ইসলাম জানান, তার স্বামী নুরুল ইসলাম হার্টের রোগী। তার হার্টে ছয়টি ব্লক রয়েছে। টাকার অভাবে স্বামীর চিকিৎসা বন্ধ। বিষয়টি নিয়ে তিনি লালমোহন উপজেলা যুবদলের প্রস্তাবিত সভাপতি বাবুল পাটোয়ারীর কাছে জমি উদ্ধারে সহায়তা চান। শিল্পী ইসলামের অভিযোগ, ‘আমাকে বাবুল পাটোয়ারী কয়, মেজর হাফিজের বাসায় গেছোস না, নেতাই দিবো তোরো ঘর।’ স্বামীর অসুস্থতার বিষয়টি জানালে বাবুল পাটোয়ারী শিল্পী ইসলামের স্বামী নুরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে মরে যায়, মরে যাইতে দে, পিছে পিছে দৌঁড়াছ ক্যা।’
শিল্পী ইসলামের স্বামী নুরুল ইসলাম ভিডিও সাক্ষাতকারে অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবুল পাটোয়ারী আমার স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমরা যার কাছে বিচার নিয়ে যাই, তারাই আমার স্ত্রীর উপর হুমরি খেয়ে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘আমি হাফিজ ভাইয়ের পা পর্যন্ত ধরেছি। বলেছি ভাইয়া আমার জমি লাগবে না, আমার চিকিৎসাটা করাইয়া দেন।’
শিল্পী ইসলাম ও তার স্বামী নুরুল ইসলাম জানান, লালমোহন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব বাবুল পঞ্চায়েত ও উপজেলা যুবদলের প্রস্তাবিত সভাপতি বাবুল পাটোয়ারীর কুপ্রস্তাবের বিষয়টি আমরা গত ১৯ জুলাই ঢাকায় এসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের বনানীর বাসায় গিয়ে তাকে অবহিত করি। তিনি এই বিষয়ে পরে দেখবেন বলে আমাদের জানান। কোনো উপায় না দেখেই তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বলে জানান শিল্পী ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বাবুল পঞ্চায়েত খোলা কাগজকে বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তবে কাল আমাদের সম্মেলন। আর এই সম্মেলনকে সামনে আমার রেখে মান-সম্মানের ক্ষতি এবং আমি যেন সভাপতি না হইতে পারি— মূলত এই ষড়যন্ত্র শুরু করছে।’
ক্লাবের নামে জমি ও দোকান দখল করে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নামে রেজিস্ট্রি করার বিষয়টি সত্য কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনেই এই জমি কেনা হয়েছে। আর এই জমির মালিক তো এই নারী না, মালিক হচ্ছে তার শ্বশুর। সে শুধু আমাদের প্রতিপক্ষের কাছে থেকে টাকা—পয়সা খেয়ে বদনাম ছড়িয়ে আমাদের ক্ষতি করতে চাচ্ছে।’
এ ছাড়া বিষয়টি জানতে লালমোহন উপজেলা যুবদলের প্রস্তাবিত সভাপতি বাবুল পাটোয়ারী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কেকে/ এমএস