রহমতগঞ্জ ফুটবল ক্লাব। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বহনকারী একটি সামাজিক সংগঠন থেকে ধীরে ধীরে ক্রীড়া জগতে উত্তরণ ঘটে। পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ এলাকার লোকজনের উদ্যোগে মূলত ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৩ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন নাম ছিল ‘রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি’ (রহমতগঞ্জ এমএফএস)।
রহমতগঞ্জ শুধু একটি ক্লাব নয়, এটি পুরান ঢাকার মানুষের আবেগ। মোহামেডান বা আবাহনীর মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু না হলেও, রহমতগঞ্জ ক্লাব নিয়ে স্থানীয়দের গর্বের শেষ নেই। প্রতি ম্যাচে মাঠে বসে থাকা পুরান ঢাকার দর্শকদের চিৎকার প্রমাণ করে- এই ক্লাব এখনো জীবিত, এখনো প্রাসঙ্গিক।
রহমতগঞ্জ ক্লাবের তৎকালীন খেলোয়ার
ইতিহাস
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে পুরান ঢাকায় রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাশেম সাহেব ছিলেন পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ইমামগঞ্জের আলাউদ্দিন, মো. আজম, আহমদ হোসেন, মো. সাদেক এবং আবু সাঈদ। আবদুস সোবহান এবং মো. কাশেম যথাক্রমে ক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত, ক্লাবটি একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হতো, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি খেলাধুলায় জড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, ক্লাবটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ শুরু করে, এলাকার তরুণদের নিয়ে একটি দল গঠন করে।
১৯৫০ সালে, মো. কাশেম, তৎকালীন ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খাজা আজমল সাহেবের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন এবং দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ফি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৩ সালে, সভাপতি মোঃ আরেফ মিয়া সরদার এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ আউয়ালের নেতৃত্বে, ক্লাবটি তৃতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়।
রহমতগঞ্জ ক্লাবের খেলোয়ার
১৯৬৪ সালে, ঢাকা হলের জাহাঙ্গীর ফয়েজের সহায়তায় ক্লাবটি একটি দল গঠন করে, যার মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমএম শরীফ, রমজান আলী, মন্টু আবজান খান, আব্দুল আজিজ এবং অধিনায়ক বাহারউদ্দিন। দলটি দ্বিতীয় বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হয় এবং প্রথম বিভাগে উন্নীত হয়।
১৯৬৫ সালে, ক্লাবটি কিউএম রফিক দিপুর নেতৃত্বে প্রথম বিভাগে প্রবেশ করে। ক্লাবটি প্রথম বিভাগে তাদের প্রথম মৌসুম দশম স্থানে শেষ করে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত টানা তিন মৌসুম ধরে তারা ধারাবাহিকভাবে পঞ্চম স্থানে ছিল। এই সময়ে ক্লাবের হয়ে খেলা উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন সুলতান আহমেদ, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, গোলাম সারওয়ার টিপু, মঞ্জুর মুর্শিদ গাউস, শাজাহান আলম এবং স্কুটার গফুর। ১৯৬৬ সালে শাজাহান আলমের নেতৃত্বে ক্লাবটি প্রথম আগা খান গোল্ড কাপে অংশগ্রহণ করে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন ক্লাবটি পশ্চিম পাকিস্তান সরকারি প্রেসকে পরাজিত করে কিন্তু সিলনের কাছে পরাজিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের টুর্নামেন্টের রাউন্ড-রবিন লীগে পৌঁছাতে বাধা দেয়।
ফাইল ছবি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ক্লাবটি জগন্নাথ কলেজের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নূর হোসেনের কোচিংয়ে ছিল। ১৯৭৩ সালে, রহমতগঞ্জ ভারতের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত বোরদোলোই ট্রফিতে অংশগ্রহণ করে। দলে ক্লাব অধিনায়ক সুলতান আহমেদ এবং বিভিন্ন স্থানীয় ক্লাবের অতিথি খেলোয়াড় ছিলেন, যেমন নওশেরুজ্জামান, শরীফুজ্জামান, এনায়েতুর রহমান এবং জাকারিয়া পিন্টু। ১৯৭৩ মৌসুমে ক্লাবটি তৃতীয় স্থান অর্জন করে, যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌসুম ছিল। ১৯৭৭ সালে, ক্লাবটি তার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মৌসুমগুলির মধ্যে একটি উপভোগ করে, লিগ এবং লিবারেশন কাপ উভয় ক্ষেত্রেই ঢাকা আবাহনীর পরে রানার্সআপ হয়ে শেষ করে। লিগের শিরোপা নির্ধারণী খেলার প্রথম লেগে, রহমতগঞ্জ আবাহনীর সঙ্গে ০-০ গোলে ড্র করে।