সমাজসেবায় যেমন আনন্দ থাকে, তেমনি দুঃখবোধও। দেখেছি- ক্ষণিকের বন্ধু হয়ে উঠেছে শত্রু, প্রিয়জন হয়েছে পর। সম্মান হয়েছে ভূলুণ্ঠিত। তবু এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে প্রশান্তি; তা অতুলনীয়। এভাবেই সমাজসেবা নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা বলছিলেন আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. নজরুল ইসলাম ভূঞা (মাহাবুব)।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শনিবার (২৮ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন-২০২৫। এই নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক নিরাপত্তা সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম ভূঞা (মাহাবুব)। নির্বাচন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে খোলা কাগজের মুখোমুখি হন তিনি।
খোলা কাগজ : নির্বাচন সামনে, আপনার অনুভূতি কী?
নজরুল ইসলাম ভূঞা : আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, দীর্ঘ সময় পর একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। পূর্ববর্তী সময়ে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যা গণতান্ত্রিক চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিকূলতা কাটিয়ে একটি স্বচ্ছ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছি। আর এ নির্বাচনে আমাদের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে- ১. নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা। ২. যেই নির্বাচিত হোক, তাকেই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে এলাকার উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। আমি যদি পরাজিতও হই, তবুও এই লক্ষ্যকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করব, ইনশাল্লাহ।
খোলা কাগজ : ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত রূপরেখা কী?
নজরুল ইসলাম ভূঞা : আমাদের মূল উদ্দেশ্য- নির্বাচনের মেয়াদ শেষে দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিজয়ী প্যানেলকে সহযোগিতা করা এবং এলাকাবাসীর প্রয়োজনে সবসময় পাশে থাকা। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও বাসযোগ্য আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে যা প্রয়োজন তা করবো। যেমন- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধনে কার্যকর উদ্যোগ। রাস্তা, ফুটপাত, নর্দমা সংস্কারে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়। পর্যাপ্ত আলোকায়ন ও সড়ক শৃঙ্খলা রক্ষা। নিরাপত্তা জোরদারে সিসিটিভি, ওয়াকিটকি, বাইকসহ আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গার্ডদের প্রশিক্ষণ, মনিটরিং ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ। বয়স্ক ও শিশুদের জন্য ব্যায়াম ও বিনোদনের উপযোগী পার্ক উন্নয়ন। তরুণদের জন্য খেলাধুলা ও মৌসুমভিত্তিক টুর্নামেন্ট। কুরআন শিক্ষা, হামদ-নাত ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং মসজিদের আধুনিকায়নে সহায়তা।
খোলা কাগজ : ড. নূর-মাহাবুব প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
নজরুল ইসলাম ভূঞা : আমাদের প্যানেলের ২১ জন প্রার্থীই সততা, দক্ষতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার দিক দিয়ে অনন্য। তাদের মধ্যে অনেকেই অতীতে সভাপতি বা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা প্রত্যেকেই সমাজের জন্য নিবেদিত, মার্জিত এবং জনসেবায় অভিজ্ঞ।
খোলা কাগজ : বিজয় নিয়ে আপনার আশাবাদ কতটা?
নজরুল ইসলাম ভূঞা : আল্লাহর রহমতে এবং এলাকাবাসীর আস্থায় আমরা বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ। তবে এটাও বলি- বিপক্ষ প্রার্থীরাও আমাদের সুপরিচিত ও কাছের মানুষ। আমরা কোনো বিরোধ নয়, বরং সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই।
খোলা কাগজ : আপনার স্বপ্নের আদর্শ সেক্টর কেমন?
নজরুল ইসলাম ভূঞা : আমার স্বপ্ন- উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরকে একটি মডেল আবাসিক এলাকায় পরিণত করা| যেখানে থাকবে- থানা, সিটি কর্পোরেশন ও কল্যাণ সমিতির সমন্বিত মাসিক বৈঠক। সকল গেটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও যানবাহনের শনাক্তকারী স্টিকার। প্রত্যেক গলিতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও অফিস নিয়ন্ত্রিত মনিটরিং সেল। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাৎক্ষণিক সমন্বয়। হকারমুক্ত ফুটপাত, দখলমুক্ত পার্ক ও নির্মল পরিবেশ। সন্ধ্যার পর পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে নিয়মিত টহল। বাসিন্দাদের তালিকা হালনাগাদ ও নিয়মিত মনিটরিং।
খোলা কাগজ : সমাজসেবায় এখন মানুষের আগ্রহ কম কেন?
নজরুল ইসলাম ভূঞা : সমাজসেবকদের ওপর নানা অপবাদ, দমন-পীড়ন, দলীয় তকমা আর প্রশাসনিক হয়রানির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অনেক নিরপেক্ষ মানুষ ‘নির্দলীয়’ পরিচয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এমনকি গুম, মামলা ও কারাবন্দিত্বেও। ফলে অনেকে আড়ালে চলে গেছেন, ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে চান না। আমি নিজেও সাম্প্রতিক সময়ে এমন হয়রানির শিকার হয়েছি।
খোলা কাগজ : তবুও ঝুঁকি নিয়ে কেন সমাজসেবায় থাকছেন?
নজরুল ইসলাম ভূঞা : যদি আমরা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিই, তাহলে সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের প্রশ্ন করবে- তোমরা কী রেখে গেলে? তাই সমস্ত ভয়-ভীতি, বাধা ও হুমকিকে উপেক্ষা করেই আমি সমাজের পাশে আছি, থাকবো ইনশাল্লাহ।
কেকে/এএস