শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫,
১৪ আষাঢ় ১৪৩২
বাংলা English

শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
শিরোনাম: যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা      ফের আলোচনায় স্থানীয় নির্বাচন       ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করা উচিত : ডা. শফিকুর রহমান       সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত সম্ভব : ড. ইউনূস      পরীক্ষা দিতে না পারা সেই শিক্ষার্থীর বিষয়ে ‘বিবেচনা’ করছে সরকার      গাজায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলি হামলায় আরো ৭১ জন নিহত      যান্ত্রিক ক্রটি, উড্ডয়নের পর ১৫৪ যাত্রী নিয়ে ফিরল বিমান      
গ্রামবাংলা
দুর্ভোগের আরেক নাম পাংশা পৌরসভা
মো. আকাশ মাহমুদ, পাংশা (রাজবাড়ী)
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ১১:১৩ এএম
ছবি : প্রতিনিধি

ছবি : প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ৩৬ বছর ও প্রথম (‘ক’) শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার ৯ বছর পার হলেও পৌরাসভার সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। মজবুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, ফুটপাত দখল, যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশা নিধন, বিনোদন কেন্দ্র (শিশু পার্ক) গড়ে না উঠাসহ নানা সমস্যায় প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার সেবার মান এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতেই রয়ে গেছে বলে মত নাগরিকদের।

স্থানীয় সরকার বিভাগের শর্ত অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, সড়কবাতি, নালা-নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধা থাকতে হবে। তবে প্রথম শ্রেণির মর্যাদাপূর্ণ পাংশা পৌরসভায় এখনো এসব শর্ত শতভাগ পূরণ হয়নি। বাসিন্দারাও প্রথম শ্রেণির সেবা পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।

অথচ শিক্ষা-দীক্ষা ও অবকাঠামোগত দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে রাজবাড়ী জেলা পাংশা পৌরসভা। তবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা, যানজট, ফুটপাত দখল-বাণিজ্যসহ নানা সমস্যায় পিছিয়ে পড়ায় ম্লান হয়ে গেছে অনেক অর্জন। তবে কেমন সেবা পাচ্ছেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা?

আষাঢ় মাস আসাতে না আসতেই পর্যাপ্ত নালা-নর্দমা না থাকায় জলাবদ্ধতায় পানি বন্ধি পৌরবাসী। এ যেন ফোরার উপর বেতরাঘাত। পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লার রাস্তা এখন পানির নিচে। মানুষের উঠানে ও ঘরের মধ্যে জলরাশির ছড়াছড়ি। ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পৌরসভার মাঠ। পৌর ভবনের বারান্দা পর্যন্ত প্রায় উঠে গেছে পানি। এতে ভোগান্তিতে পরেছে পৌরসভায় সেবা নিতে আশা নাগরিকেরা।

পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভাধীন মৈশালা ঋষিপাড়া (মাগুড়াডাঙ্গী দক্ষিনপাড়া মুখি রাস্তা), পৌর পিছন গেটের রাস্তা, কুড়াপাড়ার রাস্তা, দত্বপাড়ার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও এসকল এলাকার অনেক বাড়ির ভিতরে, উঠানে ও রুমের মধ্যে জমে রয়েছে পানি। এক ঘণ্টার ভাড়ি বৃষ্টিতেই কিছু কিছু এলাকায় দির্ঘদিন পানি জমে থাকে। যে কারণে দূর্ভোগ পোহাতে হয় পৌর বাসিন্দাদের।

এদিকে পৌর শহরে প্রবেশের একমাত্র সড়কের পাশে পৌর এলাকায় ১০০ মিটার জায়গা জুড়ে খোলা-মেলা পরিবেশে গড়ে ওঠা ময়লার ভাগার গড়ে ওঠার ফলে এই এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। ভাগাড়ের ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর জন্য ভাগাড়ে জ্বালানো হয়েছে আগুন। সেই আগুনের ধোয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় মহাসড়ক। ধোয়র কারণে যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে মহাসড়কে। আগুনের ধোয়া চোখে লাগায় কেউ কেউ চোখ বন্ধ করেই পার হচ্ছে ভাগারের ধোয়াযুক্ত এলাকা।
ভাগার এলাকায় এলেই রোমাল বা হাত দিয়ে মুখ চেপে পার হচ্ছে পথচারীরা। এতে বাড়ছে সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

এছাড়াও খানাখন্দে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে পৌর শহরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। পৌরবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন এমনাবস্থা থাকলেও সংস্কারের নেই উদ্যোগ। বছরের পর বছর সড়কগুলো সংস্কার না করার কারণে ঋষিপাড়া, মাগুরাডাঙ্গী, কলেজ রোড, প্রধান সড়ক, বাড়েক মোরড় থেকে উপজেলা মোড়, মৈশালা মোড় থেকে বড়গাছি বাসস্ট্যান্ড ও শিল্পকলা মোড় থেকে টিএনটি মোড় পর্যন্ত শহরের বেশির ভাগ সড়কে খানাখনন্দে ভরা। এতে পৌরবাসীকে এসকল সড়ক দিয়ে যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এর পাশাপাশি দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে পাংশা পৌর শহ‌রের যানজট। পৌর বাজারের হকার্স মার্কেট থাকা সত্ত্বেও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা সেখানে না গিয়ে বাজারের প্রধান সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ দোকান-স্থাপনা ও রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বিকল্প রাস্তা বা সংযোগ রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় অপ্রস্তুত সড়কে যত্রতত্র ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা, অটো ভ্যান, মটরসাইকেল পার্কিংসহ নিয়মকানুন না মেনে শহরে অটো রিকশা ও ভ্যানগুলোর অবাধ বিচরণও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন জনসাধারণ। তারপর ভারী যানবাহন শরের মধ্যে দিনে চলাচল এবং গাড়ি লোড-আনলোড করায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভারী যানবাহন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টার আগমুহূর্তে পৌর শহরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না কেউই। প্রতিনিয়ত শহর দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালুভর্তি ট্রাক ও বাটা হাম্বারসহ ভারী যানবাহন। যার ফলে পৌরশহরের রেলগেট, কালিবাড়ি মোড় ও পুরাতন বাজারসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। তীব্র এ যানজটে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যানবাহনের যাত্রী, চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে তীব্র যানজটে শহর বাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জনসাধারণের।

পৌর শহরের বাসিন্দা একাধিক সুধিজন বলেন, আমাদের জানা মতে প্রথম শ্রেণির পোরসভায় যে সকল নাগরিক সুবিধা থাকা দরকার তা আমাদের পৌরসভায় নেই। পাংশা পৌরসভা এলাকায় বিভিন্ন বড় বড় পাকা বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু ওই সকল এলাকায় কোনো পরিকল্পনামাফিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং রাস্তা নেই। যাও আছে সেগুলারও অবকাঠামো ঠিক নেই। এসকল ব্যবস্থা না থাকালেও আমাদের প্রাক্তন মেয়র আব্দুল আল মাসুদ বিশ্বাস কিভাবে দ্বিতীর ('খ') শ্রেণির পাংশা পৌরসভাকে প্রথম ('ক') শ্রেণির পৌরসভাতে উন্নিত করালেন সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে বিশিষ্টজনেরা মনে করেন জুতসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে পৌরসভার প্রতিটি এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং পুরাতন ড্রেনগুলো সংস্কার ও পরিস্কার করতে হবে। দ্রুত সুন্দর ড্রেনেজ ব্যাবস্থা নিশ্চিত করে পানি নিস্কাশনের মাধ্যমেই পৌর—বাসীদেরকে এ দূর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব বলেই মনে করেন তারা।

" style=



যানজট ও ফুটপথ দখল নিয়ে জ্যামে আটকে পড়া পৌর এলাকার বাহিরে থেকে আসা মানিক মিয়া নামের একজন বলেন, ভালোমানের স্কুল কলেজ পৌর শহরের মধ্যে হাওয়ায় ছেলে মেয়েরা এখানে পড়তে আসে কিন্তু পৌরসভার মধ্যে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গেই জ্যামে আটকে থাকতে হয় যার ফলে বেশিরভাগ সময় স্কুল কলেজে পৌছাতে লেট হয়ে যায় তাদের। জ্যামের কারণে পাঁচ মিনিটের রাস্তা কোন কোন সময় ঘণ্টার পর ঘন্টা রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। আমি নিজে প্রায় ৩০ মিনিট জ্যামে আটকে আছি। সামনে এইচএসসি পরিক্ষা। পরিক্ষার সময় এমন জ্যামে আটকে পরলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে ঢুকতে লেট হয়ে যাবে। যানজট নিরসনে প্রশাসনের তেমন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। প্রশাসন যদি ফুটপথ দখলমুক্ত ও অটোরিকশা, অটোভ্যান গুলোর যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করে তাহলে যানজট অনেকাংশে কমবে।

এ সকল বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক এস এম আবু দারদা বলেন, এবছর পৌরসভায় মোট ১৪টি প্রকল্পের বাজেট পাশ হয়েছে। তার মধ্যে কলেজ মোড়ের ময়লার ভাগারের বাউন্ডারি বেড়াসহ সিসি রাস্তার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যেনো ট্রাক রাস্তার পাশেই ময়লা না ফেলে ভিতরে গিয়ে ময়লা ফেলে এবং দুর্গন্ধ বেশি না ছড়ায়। খুব শিগ্রই এটা বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পই জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ নিয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি ইমার্জেন্সি ফান্ড হিসেবে কিছু অর্থ রাখা হয়েছে যেটা এই বর্ষা মৌসুমে পৌর শহরে যে পানি জমবে সেটা নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার করা হবে।

ফুটপথ দখল ও যানজট নিরসনে তিনি আরো বলেন, ফুটপথ দখল করে যে সকল ফল ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন তাদেরকে কাঁচা বাজারের মধ্যে এক স্থানে স্থানান্তরের জন্য কাজ করা হচ্ছে। এবং ফুটপথের কাপর ব্যবসায়ীদেরকেও বাজার বণিক সমিতির সাথে কথা বলে তাদেরকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হবে। এগুলা বাস্তবায়ন হলে যানজট অনেকাংশে কমবে বলে আশা করি।

এছাড়াও পৌর শহরের কলেজ মোড় থেকে উপজেলা মোড় পর্যন্ত সড়কটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বাকি বেহাল সড়ক গুলোর কাজ এই অর্থ বছরের সম্ভব না হলেও আগামী অর্থ বছরের বাস্তবায়নের আশ্বাস পৌর প্রশাসকের।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের সর্বপ্রথম জাতীয় ও ছয়লেনের এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তন
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৪
গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে দগ্ধ শিশু, ১৩ দিন পর মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সব পদে মাসুদ-পন্টি প্যানেলের জয়
সাইপ্রাসে ব্যাপকহারে জমি কিনছে ইসরাইলিরা, সাইপ্রাসিদের উদ্বেগ

সর্বাধিক পঠিত

ই-অরেঞ্জ কেলেঙ্কারির মূলহোতা আমান উল্লাহ চৌধুরী গ্রেফতার
নালিতাবাড়ীতে ভারতীয় মদসহ গ্রেফতার ২
লালমনিরহাটে শাখা-সিঁদুর পরে রথযাত্রায় প্রবেশ, আটক ৫ নারী
নিয়ামতপুরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা
আগামীর রাজনীতি যেন ফ্যাসিবাদের জন্ম না দেয়

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close