মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চলতি জুন মাসেই ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, যা ২০২০ সালের পর এক মাসে সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার এই ধারা অব্যাহত থাকলে তা সরাসরি মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ইউরোপ, জাপান, ভারত এবং তুরস্কের মতো আমদানিনির্ভর অর্থনীতিগুলো চাপে পড়বে।
তবে এখনো সরবরাহ ব্যাহত না হওয়ায় দাম তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৭ ডলারের মতো। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এটি ১৩৯ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
‘ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে’
ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এবিএন আমরোর প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ক্রিস্টোফ বাউচার সতর্ক করে বলেছেন, তেলের দাম যদি ব্যারেলপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ ডলারে পৌঁছে স্থির হয়, তাহলে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে।
বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তেল সরবরাহ হয় হরমুজ প্রণালী দিয়ে, যা এখন নতুন করে নজরে এসেছে। এই পথ ব্যাহত হলে দাম আরও বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন হেজ ফান্ড সভেল্যান্ড ক্যাপিটালের পরিচালক নাদিয়া মার্টিন উইগেন।
চীন এখনো অতিরিক্ত আমদানি শুরু না করায় মালবাহী জাহাজের ভাড়া স্থির আছে। তবে পরিস্থিতি বদলালে চীনের চাহিদা মূল্যবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধিতে চাপ
লম্বার্ড ওডিয়েরের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্যামি চার বলেন, তেলের দাম যদি ১০০ ডলারে গিয়ে স্থির হয়, তাহলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমে যেতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতি ১ শতাংশ বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরবিসি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সেস ডোনাল্ডের ভাষায়, তেলের দাম ৭৫ ডলার হলে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেল আমদানিনির্ভর দেশগুলো—বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক এবং মরক্কো। বিপরীতে, উপসাগরীয় দেশ, নাইজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা ও ভেনেজুয়েলার মতো তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো লাভবান হতে পারে।
ডলারের শক্তি কি হারাচ্ছে?
ঐতিহ্যগতভাবে তেলের দাম বাড়লে ডলারের মান বাড়ে। তবে এবার সেই চিত্র বদলে গেছে। ডলারের মান তেমন বাড়েনি, বরং তুলনামূলকভাবে দুর্বল রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি তেল আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য সাময়িক স্বস্তির কারণ হতে পারে।
শেয়ারবাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
তেলের অস্থির বাজার এখনো শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব ফেলেনি। গোল্ডম্যান স্যাকস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের গ্লোবাল কো-হেড ওসমান আলী বলেন, যতক্ষণ না এটি বড় আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা এখনো সতর্কভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
তবে খাতভিত্তিক প্রভাব চোখে পড়ছে। তেল ও গ্যাস কোম্পানি ও প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে, আর এয়ারলাইনস ও পরিবহন খাতের শেয়ার পড়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, উত্তেজনার মাঝেও ইসরায়েলের শেয়ারবাজার গত এক সপ্তাহে ৬ শতাংশ বেড়েছে।
কেকে/এএম