বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের ফলে দেশের প্রায় ২০ শতাংশ প্লাস্টিক কারখানা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
সংগঠনটি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এছাড়া চলমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে এই শিল্প আরও বড় হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় শিল্পের বিকাশে প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার ও গৃহস্থালি সামগ্রীর ওপর ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে পল্টনের বিপিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি শামীম আহমেদ। এতে সমিতির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিপিজিএমইএ নেতারা জানান, সরকার পোশাক খাত ছাড়াও প্লাস্টিকসহ আরও চারটি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতের উন্নয়নে তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেই। তাদের মতে, সামগ্রিক বাজেট ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার না দিয়ে ‘পুরোনো বোতলে পুরোনো পানি পরিবেশনের’ মতো হয়েছে, এমনকি ‘বোতলটাও পাল্টানো হয়নি।’
বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শিল্প কোভিড-১৯ সময়ে ক্ষতির মুখে পড়েছিল। অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছিল। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এখন কোভিড আবার শুরু হয়েছে। এর মাঝে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আরও শঙ্কা তৈরি করছে। যুদ্ধের ফলে এলএনজিসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির খরচ বাড়বে, এতে আবারও ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের প্লাস্টিক খাত।’
বিপিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, প্লাস্টিক শিল্প বর্তমানে দেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই খাতে দক্ষতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। অথচ শুল্ক ও ভ্যাট জটিলতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন যন্ত্রপাতি আমদানিতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রস্তাবনা উপেক্ষিত হয়েছে। সংগঠনটির দাবি, বাজেট ঘোষণার আগেই তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), ট্যারিফ কমিশন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠানে খাত সংশ্লিষ্ট চাহিদা ও সমস্যার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা দাখিল করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও অনেকেই সুপারিশের মাধ্যমে প্রস্তাবনাগুলোর যৌক্তিকতা তুলে ধরলেও তা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।
সংগঠনের সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, বাজেটে সরকার আত্মতুষ্টির ছবি আঁকলেও দেশের অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক এবং বিশ্লেষকরা এই বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, বাজেটটি কাক্সিক্ষত কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি, বিশেষত অর্থনৈতিক সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দিক থেকে।
বিপিজিএমইএ যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্লাস্টিক সেক্টরের জন্য খাতভিত্তিক শুল্ক কর সুবিধা অব্যাহত রাখা, মৌলিক কাঁচামালের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, এবং রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সংক্রান্ত বিদ্যমান প্রজ্ঞাপনে বিপিজিএমইএ-কে অন্তর্ভুক্ত করা। এছাড়াও, ‘ফিলার মাস্টার ব্যাচ’ এবং ‘চিলার’ পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো, খেলনা শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণের উপর শুল্ক হ্রাস, ‘এ্যালু এ্যালু বটম ফয়েল’ এবং ‘প্রিন্টেড এ্যালুমিনিয়াম ব্লিষ্টার/টপ ফয়েল’-এর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব, এবং রিসাইক্লিং প্রোডাক্টের ওপর আরোপিত আয়কর প্রত্যাহারের বিষয়েও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এসব বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি না পড়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
সংগঠনের সহসভাপতি এনামুল হক বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘গাজীপুরে আমার কারখানায় দিনে ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। অথচ একটি মেশিন গরম হতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। বিল বাড়ছে, কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস দেওয়া হচ্ছে না।’
সংগঠনের পরিচালক সৈয়দ নাসির বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণে বাজেটে তেমন কিছুই নেই। এমনকি বাজেটে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিফলন নেই। বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে, উন্নয়নের দিকনির্দেশনা নেই।
কেকে/এজে