বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষের উন্মাদনার শেষ নেই। এক একটি বিশ্বকাপের জন্য মানুষ প্রতীক্ষা করে দীর্ঘ চার-চারটি বছর।
প্রথম বিশ্বকাপ-১৯৭৫ : ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি নিয়ে ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স। ১৯৬৫ সালে এটার নামকরণ করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স। সবশেষ ১৯৮৯ সালে নামকরণ করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পর ১৯৭৫ সালে আয়োজন করে প্রথম বিশ্বকাপ।
১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপটি ছিল আইসিসি আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপ। এতে আটটি দেশ অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ছয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ। বাকি দুটি ছিল আইসিসির সহযোগী দেশ। ৭-২১ জুন আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডের ছয়টি ভেন্যুতে রাউন্ড রবিন ও নকআউট ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ বিশ্বকাপ। প্রুডেনশিয়াল ইনসিওরেন্স কোম্পানি এ বিশ্বকাপের পৃষ্ঠপোষক হওয়ায় বিশ্বকাপের নামকরণ করা হয় ‘প্রুডেনশিয়াল কাপ’। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
খেলার ফরম্যাট : প্রতিটি ম্যাচের এক ইনিংসে ৬০ ওভার খেলা হয়। উভয় দলের খেলোয়াড়রা সাদা পোশাক পরে মাঠে নামেন। ম্যাচে ব্যবহৃত হয় লাল বল। এই বিশ্বকাপের সব ম্যাচই দিনের বেলায় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাথমিকভাবে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চারটি দল রাউন্ড-রবিন লিগ পদ্ধতিতে একে অপরের মুখোমুখি হয়। প্রতি গ্রুপ থেকে শীর্ষস্থানধারী দুটি দলসহ মোট চারটি দল সেমিফাইনালে ওঠে। সেখানে নকআউট পদ্ধতিতে লড়াই করে ফাইনালে ওঠে দুটি দল।
ছয়টি পৃথক মাঠে মোট ১৫টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে গ্রুপ পর্বের ১২টি, সেমিফাইনাল দুটি এবং ফাইনাল ম্যাচ।
অংশগ্রহণকারী দল : এ বিশ্বকাপে বিভিন্ন অঞ্চলের আটটি দল অংশ নেয়। তার মধ্যে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে পূর্ব আফ্রিকা। আমেরিকার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইস্ট এশিয়া প্যাসিফিক থেকে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে ইংল্যান্ড অংশ নেয়। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ছিল টেস্ট খেলুড়ে দেশ। পূর্ব আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা ছিল আইসিসির সহযোগী দেশ।
গ্রুপ পর্ব : ‘এ’ গ্রুপে ছিল ভারত, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা। ‘বি’ গ্রুপে ছিল শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
‘এ’ গ্রুপ থেকে তিন ম্যাচের তিনটিই জিতে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচের দুটিতে জিতে ৮ পয়েন্ট নিয়ে নিউজিল্যান্ডও টিকিট পায় সেমিফাইনালের। বাদ পড়ে যায় ভারত ও পূর্ব আফ্রিকা।
‘বি’ গ্রুপ থেকে তিন ম্যাচের তিনটিতে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুটিতে জিতে অস্ট্রেলিয়াও সঙ্গী হয় তাদের। বাদ পড়ে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
সেমিফাইনাল : প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করে ৩৬.২ ওভারে মাত্র ৯৩ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। জবাবে ২৮.৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৫২.২ ওভারে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ৪০.১ ওভারে মাত্র ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ফাইনালের টিকিট পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনাল : ২১ জুন ১৯৭৫। প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায় অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের সেঞ্চুরিতে (১০২) ও রোহান কানাইয়ের অর্ধশতকে (৫৫) ভর করে নির্ধারিত ৬০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে গ্যারি গিলমার সর্বোচ্চ ৫টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান জেফ থমসন।
জবাবে ৫৮.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭৪ রানের বেশি করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পায় ১৭ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার কিথ বয়েজ। তিনি ৪টি উইকেট নেন। লয়েড নেন একটি উইকেট। বাকি পাঁচটি রান আউটের খাতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ব্যাট হাতে ১০২ ও বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়োড।
কেকে/এএম