ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই দুনিয়াজুড়ে বাড়তি উন্মাদনা। ফুটবলপ্রেমী-অনুরক্তরা এখন থেকেই হিসাব-নিকাশ শুরু করে দিয়েছে। যার যার প্রিয় দল কোন গ্রুপে কার সঙ্গে ভালো করবে। কোন দল সেমি বা ফাইনালে খেলবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো- ৩ দেশের ১৬টি ভেন্যুতে বসবে এবারের বিশ্বকাপ-২০২৬ আসর। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে এটি। দলের সংখ্যা ৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৮। আর ম্যাচের সংখ্যা ৬৪ থেকে এক লাফে ১০৪!
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ওই দিন হবে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। আর ড্রয়ের পরই সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা ছক আঁকতে শুরু করবেন, কোন পথে তাদের প্রিয় দল যেতে পারে ফাইনালে! নিউ জার্সির বিখ্যাত মেটলাইফ স্টেডিয়ামে কার মাথায় উঠবে বিশ্বজয়ের মুকুট, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু হবে আলোচনা।
অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে ছয়টির নাম অবশ্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যে চারটি উঠবে ইউরোপীয় প্লে-অফ থেকে। বাকি দুটি আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফ জিতে, তবে বড় দলগুলো প্রস্তুত। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা চাইবে ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখতে, কিন্তু কাজটা সহজ হবে না। ২০২২ বিশ্বকাপের রানার্সআপ ফ্রান্স আছে। আছে বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনও।
ড্রয়ের আগেই অপ্টার সুপারকম্পিউটার করেছে বিশ্বকাপ নিয়ে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী। চলুন দেখে নেওয়া যাক সুপারকম্পিউটারের চোখে কোন দলের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু
স্পেন : ১৭.০%
২০২৪ ইউরোতে লুইস দে লা ফুয়েন্তের স্পেন ছিল চোখ ধাঁধানো দল। সাম্প্রতিক সময়ের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এমন আধিপত্য কমই দেখা গেছে। স্পেন যদি শিরোপা জেতে, লামিন ইয়ামালের বড় ভূমিকা থাকবে, এটা বলাই যায়। ১৭তম জন্মদিনের পরদিনই ইয়ামাল ইউরো ফাইনালে খেলেছিলেন। পেলের রেকর্ড ভেঙে হয়েছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী বিশ্বকাপ/ইউরো ফাইনালিস্ট।
ফ্রান্স : ১৪.১%
২০২৬ বিশ্বকাপে ফরাসি ফুটবলের একটা যুগ শেষ হবে। ১৪ বছর পর জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব ছাড়বেন দিদিয়ের দেশম। বিদায় বেলায় তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা কোচ হিসেবে নিজের জায়গাটা পাকা করে যেতে।
ইংল্যান্ড : ১১.৮%
টমাস টুখেলের অধীন ইংল্যান্ড প্রথম (সম্ভবত শেষ) টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে। জার্মান কোচ টুখেলের জন্য কাজটা সহজ, যে দলটা বারবার ঠিক শেষ সিঁড়িতে গিয়ে আটকে যায়, তাদের একটু ঠেলা দিয়ে ওপরে তুলে দেওয়া। এ কাজ করতে পারলে তিনি হবেন ফুটবল ইতিহাসের তৃতীয় কোচ, যিনি বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়নস লিগ-দুটিই জিতেছেন।
আর্জেন্টিনা : ৮.৭%
আর্জেন্টিনা-সমর্থকদের চোখে মেসি দীর্ঘদিন ধরে ম্যারাডোনার ছায়ায় ঢাকা পড়ে ছিলেন। কাতার ২০২২- তাকে সেই ছায়ার বাইরে নিয়ে এসেছে। ৭ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট। গ্রুপ, শেষ ষোল, কোয়ার্টার, সেমিফাইনাল, ফাইনাল- সব ধাপে গোল করে ইতিহাসে একা দাঁড়িয়ে। শট, সুযোগ তৈরি, ফাউল আদায়- তিন ক্ষেত্রেই ছিলেন সেরা। এক টুর্নামেন্টে এই তিন ক্যাটাগরিতেই শীর্ষে থাকার কীর্তি আছে শুধু আর একজনের- ম্যারাডোনা, ১৯৮৬।
জার্মানি : ৭.১%
২০১৪ সালে মারাকানায় আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে আর জেতা হয়নি জার্মানির। ইউরো ২০২৪-এ ঘরের মাঠে ভালো খেললেও কোয়ার্টার ফাইনালে থামতে হয়েছে ইউলিয়ান নাগলসমানের দলকে। তবে জার্মানদের কখনোই বাতিলের খাতায় ফেলা যায় না।
পর্তুগাল : ৬.৬%
২০২২ বিশ্বকাপের পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে সৌদি আরবের আল নাসরে যাওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হারিয়ে যাবেন, বাস্তব কিন্তু উল্টো। খবরের শিরোনামে তিনি আজও নিয়মিত।
সম্প্রতি তার লাল কার্ডের কারণে তিন ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার কথা ছিল, ফিফা তা তুলেও নিয়েছে। ফলে বিশ্বকাপে পর্তুগালের প্রথম ম্যাচ থেকেই থাকছেন তিনি। মেসি ২০২২- এ তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এবার রোনালদোরও সুযোগ নিজের গল্পের শেষটা লেখার।
ব্রাজিল : ৫.৬%
একমাত্র দল হিসেবে সব বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড ব্রাজিলের। কিন্তু বাছাইপর্বে এবার তাদের বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে। কার্লো আনচেলত্তির অধীন সেলেসাওরা খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। বলিভিয়া ও জাপানের কাছে হার এবং ইকুয়েডর ও তিউনিসিয়ার সঙ্গে ড্র-ব্রাজিলের চিরচেনা রূপের সঙ্গে যা বেমানান।
২৪ বছর হয়ে গেল বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা ছোঁয়া হয়নি ব্রাজিলের। ১৯৫৮ সালের প্রথম জয়ের পর ১৯৭০ থেকে ১৯৯৪-এর মাঝেই কেবল এত দীর্ঘ খরা দেখেছিল তারা। সেই খরা কেটেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এবারও আসর সেই যুক্তরাষ্ট্রেই। ইতিহাস কি ফিরে আসবে?
নেদারল্যান্ডস : ৫.২%
তিনবার ফাইনালে উঠেও ট্রফি ছোঁয়া হয়নি ডাচদের। বিশ্বকাপ না জেতা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলার রেকর্ড তাদেরই। রোনাল্ড কোম্যানের দল ইউরোর সেমিফাইনালে খেলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে।
বর্তমান দলে ব্রিটিশ প্রভাব বেশ স্পষ্ট। লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সর্বশেষ ম্যাচে (৪-০) চারটি গোলই করেছেন প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়েরা (টিজানি রেইন্ডার্স, কোডি গাকপো, জাভি সিমন্স ও ডনিয়েল ম্যালেন) ডাচদের ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথম।
কেকে/ এমএস