সরকার গত ২০ মে দেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালু করে। এটি চালু হওয়ার পর এর দাম নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। আবার কেউ কেউ স্টারলিংককে ইন্টারনেট জগতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন।
স্টারলিংক শুরুতে দুটি প্যাকেজ দিয়ে বাংলাদেশে সেবা শুরু করছে- স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬০০০ টাকা, অন্যটিতে ৪২০০ টাকা। তবে সেটআপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে। এই অর্থ খরচ করে যে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে তা একটি মোবাইল টাওয়ার থেকে সরবরাকৃত ইন্টারনেটের সমান। এছাড়া স্টারলিংকে কোনো স্পিড ও ডেটা লিমিট নেই। সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
টেসলার প্রধান নির্বাহী ও স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে এটি দ্রুত গতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ১২৫টি দেশে এই ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে এবং এর গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ৫০ লাখের বেশি।
কীভাবে এই ইন্টারনেট সেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে
স্টারলিংক আসার আগে আমরা দুই ধরনের উৎস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল। যার মধ্যে রয়েছে- ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে সরবরাহকৃত ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেট সুবিধা শহরাঞ্চলে বেশি ব্যবহার করা হলেও গ্রাম অঞ্চল এবং গহীন এলাকায় ব্যবহার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ অনেক অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লাইন টেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না আবার রয়েছে মোবাইল টাওয়ারেরও স্বল্পতা। ফলে এসব অঞ্চলে ইন্টারনেট চালুর ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হলো স্টারলিংক।
একজন ব্যবহারকারী খুব সহজেই স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু করতে পারেন। এক্ষেত্রে কারো সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে না। শুধুমাত্র নির্দেশনা অনুসরণ করেই এটি চালু করা সম্ভব।
স্টারলিংকের মাধ্যমে কীভাবে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়
স্টারলিংক সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে। এজন্য ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পৃথিবীর লো অরবিটে ৭ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে। এসব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হয়। তবে স্যাটেলাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনে কিছু সরজ্ঞাম বা উপকরণ প্রয়োজন। যেগুলো স্টারলিংক নিজেই সরবরাহ করে থাকে। যেখানে একটি টেলিভিশনের মতো দেখতে একটি এন্টেনা ব্যবহারের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়।
এক্ষেত্রে স্টারলিংক ডিসটি উন্মুক্ত কোনো স্থাপনে স্থাপন করে, সেটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি ক্যাবল যেটি স্টারলিংক ইথারনেট অ্যাডাপটারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ইথারনেট অ্যাডাপটারটি আবার স্টারলিংক রাউটারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই রাউটার থেকে মোবাইল ব্যবহারকারীরা স্টারলিংক ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। তবে এটি ব্যবহারেও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন।
প্রচলিত ইন্টারনেটের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে স্টারলিংক?
স্টারলিংক ইন্টারনেটের দাম বেশিও হলেও গ্রাহকদের মধ্যে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ এর যন্ত্রাংশগুলো সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে (স্টারলিংকের অনুমতি অঞ্চল) এটি ব্যবহার করতে পারবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল এবং সুন্দরবনের কথাই ধরা যাক। এসব অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ যেমন নেই তেমনি মোবাইল টাওয়ারও নেই। ফলে এসব অঞ্চলে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক কিংবা কর্মরত ব্যক্তিদের ইন্টারনেট ব্যবহারে খুবই বেগ পেতে হয়। তবে এবার এ সমস্যা সমাধানে কাজ করবে স্টারলিংক। এতে করে ব্রডব্যান্ড ইন্টানেটের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। কারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দুর্গম এলাকাতে নিয়ে যাওয়া যেমন সময় সাপেক্ষ তেমনি ব্যয়বহুলও। এছাড়া স্টারলিংকে রয়েছে বিল্টইন রাউটার সুবিধা। এক্ষেত্রে রাউটার হতে রাউটারে আইএসপি সেটাপের মাধ্যমে একটি পুরো ভবনে এটি ব্যবহার করা যাবে।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেটের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, স্টারলিংক ব্যবহারকারী দেশগুলোতে গহীন অঞ্চলে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। কারণ এসব অঞ্চলে ব্রন্ডব্যান্ড এবং মোবাইল টাওয়ার সংযোগ খুবই অপ্রতুল। স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর থেকে শুধু ব্রাজিলের অ্যামাজন বনে এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে।
কেকে/এজে