ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গর্ব উল্লাসকর দত্তের সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে অবস্থিত গেজেটভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক বাড়িটি আবারও দখলের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা এবং আইনগত বাধা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক বাড়িটির উঠানে নতুন স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ডও।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইনের ১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী গেজেটভুক্ত প্রত্নসম্পদ ধ্বংস বা বিকৃতি করলে জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। তবুও অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একজন প্রভাবশালী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভারত থেকে আগত উল্লাসকর দত্তের বংশের পরিচয় দানকারী একজনের কাছ থেকে জায়গাটি কিনেছেন দাবি করে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। অথচ জায়গাটি অনেক আগেই সরকার গেজেটভুক্ত করে দখলমুক্ত ঘোষণা দেয় এবং সাইনবোর্ড স্থাপন করে প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়।
রোববার (২৫ মে) বিকালে ফের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে এমন খবর পেয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন এবং কালিকচ্ছের নায়েবকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ইউএনও জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, একাধিকবার বাড়িটি ঘিরে দখলের অপচেষ্টা হয়েছে। বরাবরই সাংস্কৃতিক রাজধানীর সুধীজনেরা রুখে দাঁড়িয়েছেন বারবার। এই ঘৃণ্য ঘটনায় বিস্ময় ও নিন্দা জানিয়েছেন সাহিত্যিক কবি জয়দুল হোসেন, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ, সরাইল উদীচীর সভাপতি মোজাম্মেল পাঠান, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, কবি তালুকদার আবুল কাশেম এবং সংস্কৃতিসেবী শাহিনুল মৃধাদের মতে সংস্কৃতিসেবীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন উদীচী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও ইতিহাস-ঐতিহ্য-প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রহমান। তিনি বলেন, উল্লাসকর দত্তের ঐতিহাসিক বাড়িতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং জাতির গৌরবময় ইতিহাসকে ধ্বংস করার শামিল। এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সচেতন মহল মনে করছে, এই ঘটনাটি শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জাতীয় গুরুত্বে দেখা প্রয়োজন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সচেতন নাগরিকরা ঐতিহাসিক উল্লাসকর দত্তের বাড়ি পুনরায় দখলমুক্ত করে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
কেকে/এআর