তামিম হোসেন। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রলীগের হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী নাম। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয় তামিম।
১২ জুলাই, বিকালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। আন্দোলন বাধা দিতে আসে ছাত্রলীগ। বাধাদানের ভিডিও করায় তামিমকে কলেজটির নজরুল হলে ২ ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতার। প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা হয় আঙ্গুলের নখ। ছুরিকাঘাত করা হয় শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। পেটানো হয় স্টপ দিয়ে।
তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরও সেখানে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতার। এর মধ্য দিয়েও বেঁচে ফিরলে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে দুই মাসের বেশি সময়।
সম্প্রতি কুমিল্লায় আলোচনা চলছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত 'সি' ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধাদের আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করবে সরকার। এর একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তালিকায় স্থান পেয়েছে কুমিল্লার ৩৫৭ জন জুলাই যোদ্ধাদ নাম। এ তালিকায় নাম নেই তামিমের।
ভুক্তভোগী তামিম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি কলেজটির দুইটি সামাজিক সংগঠনের নিয়মিত সদস্য। তার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সাইতলা গ্রামে। সে ওই গ্রামের কৃষক আলী আসাদের ছেলে।
তালিকায় তামিমের নাম না থাকার বিষয়ে তামিম বলেন, যখন আহতদের এম আই এস কার্যক্রম চলছিল, তখন কয়েকবার করে কলেজে যোগাযোগ করেছিলাম। কলেজ থেকে বলছিল আজ নেট নাই। আরেকদিন বলে, আজ আমাদের লোক পরিক্ষার ডিউটিতে। এই সেই নানান বাহানা দিয়েছে। কলেজের আশায় থেকে বাহিরে আর কোথাও বা কারে সাথেই যোগাযোগ কর হয়নি। শেষমেশ আমার নাম তালিকাভুক্তই হয় নাই। আশ্চর্যের বিষয় হলো? আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত বা এখনকার প্রতিনিধিগণ সবাই আমাকে দেখলেই চিনে। আর আমার নাম তালিকায় আসে নাই এটা শুনলে তারা অবাক হয়ে যায়।
তামিমের বিষয়ে কথা হয় তার সহপাঠীদের সাথে। তাদের মধ্যে খলিলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ ও বেলাল হোসেন বলেন, তামিমকে মরাধারে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি করেছে, সে কমিটি এখন পর্যন্ত তাদের তদন্তই শেষ করতে পারে নাই। তামিমকে যারা মারধর করছে, তার কেউ বিদেশ চলে গেছে, অনেক আত্মগোপন আছে।
তামিমেরা বাবা আলী আসাদ বলেন, আন্দোলন থেকে ছাত্রলীগ আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। হলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে দুই ঘণ্টা। নির্যাতনের নির্মমতা বর্ণনা আমার পক্ষে সম্ভব না। তামিমের চিকিৎসার জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। ঐ সময়গুলো আমাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। কোতোয়ালি মডেল থানায় একটা অভিযোগ করেছিলাম। ওই অভিযোগের কোনো সুরাহা পাইনি এখনো।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার ভূঁঞা বলেন, তামিমের নাম আসেনি। এ বিষয়টা আমি জানি না। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখতেছি বিষয়টি।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, তামিম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমআইএস সিস্টেমে আবেদন করতে হবে। তালিকা প্রকাশ হলেও যারা আবেদন করতে পারেনি, তারা আবেদন করতে পারবে।
কেকে/এআর