শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫,
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র      জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন      গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে      গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট      ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ : তথ্য উপদেষ্টা      যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি      শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল      
বাতিঘর
৪৭ বছর পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করেন গিয়াস উদ্দিন
সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর)
প্রকাশ: বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৪:১৪ পিএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

৪৭ বছর ধরে পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর এলাকার মো. গিয়াসউদ্দিন কাজী। রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে সারা বছর ৫শ থেকে ৬শ গ্রাহকের কাছে পত্রিকা নিয়ে হাজির হন তিনি। জীবনের শুরুতে হাতে খাতা কলম না নিয়ে তুলে নিয়েছেন খবরের কাগজ। কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন পরিবারের দায়িত্ব। সামাজিক যোগাযোগের কারণে এখন পত্রিকার কদর অনেকটা কমে গেছে। যে কারণে পত্রিকা বিক্রি করে তার সংসার চলছে না। এরপরও তিনি হাল ধরে রেখেছেন। মতলব উত্তরে গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে একা এ পেশায় রয়েছেন। বাকি হকাররা অন্য পেশায় চলে গেছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, প্রচন্ড কাঠফাটা রোদ ও গরম উপেক্ষা করে পত্রিকা মাথায় নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন গিয়াস উদ্দিন। এরকম প্রতিদিন তিনি পায়ে হেটে পত্রিকা বিক্রি করলেও সংসার চালানোর মতো টাকা তার রোজগার হয় না।

৪৭ বছরেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি পত্রিকা বিক্রেতা গিয়াসউদ্দিনের। ৪৭ বছর যাবৎ মতলব উত্তরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। হাফ প্যান্ট পরার বয়সে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেছিলেন এই গিয়াসউদ্দিন। তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। কষ্ট করে সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এখন তিনি বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পত্রিকার পাঠক সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই গিয়াস উদ্দিনের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন।

১৯৭৮ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের উন্মুক্ত এজেন্সি পত্রিকার দোকান থেকে সর্বপ্রথম মাত্র ৫ কপি দৈনিক ইত্তেফাক এনে মতলব উত্তরে বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে পত্রিকা পাঠক তৈরি শুরু করেন। পরবর্তীতে মতলব দক্ষিণ থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে বর্তমানে দাউদকান্দি মোহাম্মদ আলী নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে পত্রিকা এনে বিক্রি করেন তিনি। এর আগে দুয়েকটি দৈনিক পত্রিকা নারায়ণগঞ্জ থেকে নদীপথে লঞ্চযোগে মতলব উত্তরে আসত। পাঠক ছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র। ওই সময় দোকানপাট অফিস, কাচারি ছিল খুবই কম। ৮০-এর দশকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংবাদপত্রের কদর বেড়ে যায় মতলব উত্তরে।

রাস্তায় রাস্তায় অফিস কাচারিতে ঘুরে ঘুরে গিয়াস উদ্দিন ডেকে ডেকে পত্রিকা বিক্রির কাজ শুরু করেন। পত্রিকা বিক্রি করে মোটামুটি দু’বেলা আহার জোগাড় করতে সক্ষম হন এই কিশোর গিয়াসউদ্দিন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রসার, প্রশাসনের রদবদলে থানা উপজেলায় রূপান্তর হওয়ায় অফিস আদালত বেড়ে যায়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে সংবাদপত্রের চাহিদা। তখন সাইকেল কিনে পেছনের ক্যারিয়ারে বক্স তৈরি করে তাতে সংবাদপত্র বহন করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে শুরু করেন হকার গিয়াসউদ্দিন। শিশু গিয়াস উদ্দিনের সংবাদপত্র হাতে নিয়ে কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে। গিয়াসউদ্দিনের বাড়ি ছেংগারচর পৌরসভার কলাকান্দা গ্রামে।

সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে নিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন। দুই ছেলে মিজানুর রহমান ও মিনহাজ এসএসসি পাস করে ফার্মেসির দোকানে চাকুরী করেন। বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার মিতুকে এইচএসসি পাস করিয়ে বিয়ে দেন। মেঝো মেয়ে সুমাইয়া আক্তার এইচএসসি পাস করেছে। শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে স্ত্রী রাজিয়া খাতুন(৫০) ঘর সংসার সামাল দিয়ে তার পাশে থেকে দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে কিছুটা লেখাপড়া করাতে সক্ষম হয়েছেন।

বদলেছে দিন। কিন্তু বদলায়নি গিয়াস উদ্দিনের ভাগ্যের চাকা। নিরক্ষর গিয়াসউদ্দিন যিনি পত্রিকা দেখেই বুঝেন কোনটা কী পত্রিকা।

হকার গিয়াসউদ্দিন জানান, ছোট বেলায় মা মারা যাওয়ার পরে সংসারের অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারিনি। চলে যাই ঢাকায়। সেখানে কিছুদিন রাস্তায় রাস্তায় চকলেট বিক্রি করতাম। আবার চলে এসেছি মতলবে। বেছে নেই পত্রিকা বিক্রির কাজ। অনেক হকার আসছে গেছে। কিন্তু আমি কখনও ছেড়ে যাইনি এই পেশাকে। দুই ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি বর্তমানে। মাঝে করোনা ও অসুস্থতার কারণে পত্রিকা বিক্রি করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, মতলব উত্তর উপজেলার সাবেক ইউএনও শারমিন স্যার থাকাকালীন সময়ে আমাকে সরকারি সহায়তায় ছোট একটি ঘর করে দিয়েছিলেন। সেই ঘরেই আমি এখন দিনাতিপাত করছি।

দীর্ঘ ৪৭ বছর সংবাদপত্র বিক্রির সাথে জড়িত থেকে আজ তিনি বয়সের ভারে ক্লান্ত। পারেন না সাইকেল চালাতেও। এখন পায়ে হেটে পত্রিকা বিক্রি করছেন তিনি। তার ইচ্ছা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সংবাদপত্র নিয়ে পাঠকের সেবায় হাজির থাকবেন।

মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান ডলার জানান, আমি সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি পত্রিকা বিক্রেতা গিয়াসউদ্দিন ভাই লুঙ্গি পড়ে রিকশায় করে ও পায়ে হেঁটে, ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মতলব উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পত্রিকা বিক্রি করেন। গিয়াসউদ্দিন ভাই খুব ভালো মানুষ। তবে পত্রিকা থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে খুব কষ্ট করে সংসার চালান। গিয়াসউদ্দিনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সমাজের দায়িত্বশীলদের প্রতি আমি আহ্বান জানাই।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  গিয়াস উদ্দিন   ৪৭ বছর   পায়ে হেঁটে   পত্রিকা বিক্রি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

জুলাই পুনর্জাগরণে কুলিয়ারচরে ‘মা সমাবেশ’
সালথায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন গ্রেফতার
৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র
বৈরী আবহাওয়ায় মাছ শিকারে যেতে পারছে না জেলেরা
জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন

সর্বাধিক পঠিত

‘হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি’
‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
একমণ চালের দামেও মিলছে না এক কেজি ইলিশ
শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল

বাতিঘর- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close