শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫,
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে      গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট      ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ : তথ্য উপদেষ্টা      যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি      শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল      ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক      বাংলাদেশকে আলাদা কোনো শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র : প্রেস সচিব      
বেগম রোকেয়া
অবহেলিত চাতালের নারী শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ৭ মে, ২০২৫, ৯:১৭ পিএম

বাংলাদেশে ধান প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা চাতালঘরগুলোতে যেসব নারী শ্রমিক দিনভর খাটছেন, তাদের জীবনযুদ্ধের গল্প রয়ে যায় প্রচারের বাইরে। তারা নেই আলোচনায়, নেই কোনো পুরস্কারে, আছে শুধু অবহেলা, অনিশ্চয়তা আর অবিচার।

নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে মৌসুম এলে জমজমাট হয়ে ওঠে চাতাল ব্যবসা। এইসব চাতালঘরে হাজার হাজার নারী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন— কখনো খালি হাতে ধান শুকানোর তপ্ত কাজ, কখনো কাঁধে ভারি বস্তা টানা। কিন্তু বিনিময়ে তারা পান নামমাত্র মজুরি। নারী শ্রমিকদের অভিযোগ, একই কাজ করেও পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কম মজুরি দেওয়া হয় প্রতিদিন।

চাতাল শ্রমিক রিনা রানী বলেন, আমার স্বামী নেই তাই বাধ্য হয়েই এখানে কাজে আসি। ভোরে কাজ শুরু করি, সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে পারি না। এত খাটুনি, তারপরও মজুরি পাই ৮০ টাকা, আর ৮ কেজি চালের খুদ। আমাদের দুঃখ কেউ দেখে না।

চাতালে দীর্ঘদিন কাজ করছেন রিনা রানীর মতোই বাসন্তী, তিনি বলেন, আমরা যেন যন্ত্র! রোদে পুড়ে, ধুলায় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কিন্তু বিশ্রাম নিলেও অনেক সময় কথা শুনতে হয়।

প্রায় ১০ বছর ধরে চাতালে কাজ করছেন ফাতেমা বেগম, তিনি বলেন, আমরা যেন যন্ত্রের মত। যখন তিব্র শীত তখনো ভোরবেলা কাজে আসতে হয় আবার যখন প্রচণ্ড গরম তখনো অতি কষ্টে রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়। সামান্য মজুরি দিয়ে আমাদের সংসার-ই চলে না। আমাদের কষ্টের কথা কে শুনবে বা কাকেই বলব। যদি আমাদের হাজিরা আরো বাড়ে তাহলে আমরা তাও ভালোভাবে চলতে পারব।

চাতালের নারী শ্রমিকদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র। যাদের নেই অন্য কোনো আয়ের উৎস, কিংবা যাদের স্বামী বা পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই— তারা বাধ্য হয়ে এই খাটুনির পেশা বেছে নেন। অনেকেই জানান, প্রতিদিনের আয় দিয়ে সংসার চালানো তো দূরের কথা, নিজের চিকিৎসাও করা যায় না।

চাতাল মালিকদের কেউ কেউ স্বীকার করেন সমস্যা আছে, তবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। নেই পর্যাপ্ত বিশ্রামের জায়গা, নেই স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা বা সুরক্ষার কোনও নিশ্চয়তা।

কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, চাতালের নারী শ্রমিকরা না থাকলে ধান শুকানো বা সংরক্ষণই হতো না। তাদের কষ্ট আর অবদান উপেক্ষা করা উচিত না। তাদের জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

স্থানীয় সমাজকর্মী মনোয়ার লিটন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি নারী শ্রমিকের সাথে পুরুষ  শ্রমিকের মজুরির পার্থক্য নিরসন খুবই জরুরী।  শ্রমের মূল্য হতে হবে বৈষম্যহীন। নারী পুরুষ ভেদাভেদে শ্রমের মূল্য নির্ধারণ অন্যায়। মে দিবস কেবল শহরের গার্মেন্টস কিংবা কল-কারখানার শ্রমিকদের জন্য নয়, এই দিবস প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের জন্য যারা তাদের শ্রমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। চাতালের নারী শ্রমিকদের গল্পও সেই শ্রমের ইতিহাসেরই অংশ। মে দিবসে তাদের দিকে ফিরে তাকানো, তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলানো, এবং তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করাই হতে পারে সত্যিকার সম্মান।শুধু মে দিবসে নয়, সারাবছরই যেন তাদের কষ্ট আর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়— এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, শ্রম সবার জন্য সমান। কেউ যদি নারী পুরুষের শ্রমের ব্যবধান করে থাকে তাহলে সেটা অন্যায় করছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শালিখায় বাড়ছে পাটকাঠির কদর
গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে
জামায়াতে এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি : সুমন
সাতক্ষীরায় সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু
গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট

সর্বাধিক পঠিত

‘হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি’
সুলতানগঞ্জকে যদি বন্দর করা যায় তাহলে করা হবে: ড. এম সাখাওয়াত
নওগাঁয় চক্ষু হাসপাতালের উদ্বোধন
‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

বেগম রোকেয়া- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close