ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকার রাজপথে লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২১

ঢাকার রাজপথে লাখো মানুষ

অগ্নিঝরা ২২ মার্চ আজ। একাত্তরের এই দিনে হঠাৎ করেই ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সকালে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। অসহযোগ আন্দোলনের ২১ দিনেও জনতার এমন বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি। লাখো জনতার মিছিল গিয়ে সমবেত হয় বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বাসভবনের সামনে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, আমরা রক্ত দেব, তবুও স্বাধীনতা দেব না। আমাদের আন্দোলন চলবেই। সবকিছু নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। 

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আগেই তৈরি করা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি। এদিন সেই রঙিন পতাকা ঢাকার সমস্ত সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে ছাপা হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি সেই পতাকা ২৩ মার্চ তথাকথিত পাকিস্তান দিবসে বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে উত্তোলনের আহ্বান জানানো হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার পথে নামে অবিচ্ছিন্ন মিছিলের স্রোতধারা। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে ৭৫ মিনিটব্যাপী বৈঠক করেন। সংকট নিরসনে এ বৈঠক ফলপ্রসূ না হলেও জুলফিকার আলী ভুট্টো একে অভিহিত করেন ‘উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনা হিসেবে।

এদিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠককে ঘিরে তৈরি হচ্ছিল রহস্যময়তা। আলোচনার আড়ালে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদে দমন করতে ভয়ংকর পরিকল্পনা আঁটছিল। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঢাকার প্রতিটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তি নামে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। বঙ্গবন্ধু এক লিখিত বাণীতে বলেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধের দুর্গ। আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। তাই সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত। ওই ক্রোড়পত্রে অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ, অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও কামারুজ্জামানের লেখা নিবন্ধও ছাপা হয়।

এদিকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর এবং পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজে মানুষের ঢল নামে। কুচকাওয়াজের পর পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত বাঙালি যোদ্ধাদের বিশাল সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এম আই মজিদের সভাপতিত্বে কর্নেল এম এ জি ওসমানীসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ চলাকালে জনতার মুহুর্মুহু হর্ষধ্বনি ও হাততালিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। সমাবেশ শেষে সৈনিকরা কুচকাওয়াজ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। সেখানে সামরিক কায়দায় শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

সৈনিকরা শপথ নেন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সংগ্রামকে সর্বাত্মকভাবে সফল করে তোলার।
এদিকে সদ্য গঠিত সাবেক সৈনিক পরিষদ এ দিনও পল্টনে বিরাট এক সভা করে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। সভায় লে. কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী, নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ আহম্মেদ, করপোরাল (অব.) মাহমুদুন্নবী, স্থলবাহিনীর সাবেক অফিসার আশরাফসহ অন্য বক্তারা বলেন, পাকিস্তান সরকারের ২৩ বছরের হৃদয়হীন শাসন, শোষণ ও বঞ্চনাই হচ্ছে বর্তমান স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি। সামরিক নেতারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুপ্তচরবৃত্তি সম্পর্কে সবাইকে সদাজাগ্রত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রহরীর মতো সার্বক্ষণিকভাবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper