ভ্রূণের সঙ্গে কথোপকথন
রোকেয়া ডেস্ক
🕐 ১২:১৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
‘গত রাতেই প্রথম টের পেলাম তুমি আসছ, অসীম এক শূন্যতা থেকে আসা একটি ছোট্ট জীবনবিন্দুর মতো। তোমার অস্তিত্বের এই আকস্মিক ঘোষণা আমাকে অভিভূত করল, বিস্মিত করল এবং বিদ্ধ করল একটি বুলেটের মতো। এক অজানা ভীতি আমার সারা শরীরে, সমগ্র সত্তায়। ভয় তোমার জন্য। যেখানে আসছ, সেখানে তোমাকে স্বাগত জানানোর আগ্রহ আমার কোনো কালেই ছিল না। কিন্তু জানতাম যে একদিন-না-একদিন তুমি আসবেই। আমার ভয়, যদি কোনো দিন তুমি চিৎকার করে প্রশ্ন কর কেন তুমি আমাকে এই পৃথিবীতে নিয়ে এলে?’
এই মায়া, মমতা, চিন্তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে ঘটনা। এক মা আর এক ভ্রূণের মধ্যকার সম্পর্কের কাহিনী ওরিয়ানা ফাল্লাচি রচিত ‘এ লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ণ’। বাংলায় ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ শিরোনামে অনুবাদ করেছেন আনু মুহাম্মদ।
মা পেটে থাকা সন্তানকে প্রশ্ন করছেন ‘তুমি কি হবে ছেলে নাকি মেয়ে?’ মেয়ে হলে কী কী শোষণ, বঞ্চনা, নির্মমতা আর অবহেলার ভেতর দিয়ে যেতে হবে তার শিক্ষা দিচ্ছেন ভ্রূণকে। মেয়ে হলে সে যেন হয় মহীয়সী নারী। সঙ্গে সঙ্গে সে যেন মাথায় রাখে নারীর জীবন অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ। মায়ের কথায় ‘যদি তুমি ছেলে হয়ে জন্মাও, আমার কোনো দুঃখ থাকবে না।
তবে তোমার ঝামেলা তাতে অনেক কম হবে। অন্ধকার রাস্তায় ধর্ষিত হওয়ার ভয় থাকবে না। প্রয়োজন হবে না বুদ্ধিবৃত্তি ঢেকে মসৃণ শরীর বানানোর। নিজের পছন্দমতো কারও সঙ্গে শুলে কোনো বাজে কথা শুনতে হবে না তোমার। মানুষ কখনো বলবে না, যেদিন তুমি একটি নিষিদ্ধ ফল তুলে নিয়েছ সেদিন থেকেই তোমার মধ্যে পাপ ঢুকেছে। জীবন-সংগ্রাম হয়তো অনেক সহজতর হবে। তুমি তখন প্রয়োজনীয় অবাধ্যতার জন্য অপমানের শিকার হবে না, ভালোবাসার ‘দায়’ হিসেবে গর্ভধারণের ভয় থাকবে না।’