ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্থবির হয়ে গেছে ১৪ দলীয় জোট

সালাহ উদ্দিন জসিম
🕐 ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২০

অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম। নেই রাজপথের সভা-সমাবেশ-সেমিনার কিংবা ঘরোয়া কোনো কর্মসূচিও। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের তিনটি আসনের উপনির্বাচনেও জোটের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এমনকি ১৪ দলের নেতাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও তেমন নেই। অথচ ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম ও ভোটযুদ্ধের ফলে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় বর্তমান সরকার। জোটের সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতায় এলেও এর তেমন পরিচর্যা বা যতœ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ বড় শরিক আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।

১৪ দলীয় নেতারা বলছেন, ‘নাসিম সাহেবের (মোহাম্মদ নাসিম, মুখপাত্র ১৪ দল) মৃত্যুর পর মূলত ডিসফাংশনাল (অকার্যকর) হয়ে গেছে ১৪ দল। যোগাযোগ, সভা-সেমিনার কিছুই নেই।’ তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বললেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ‘করোনার কারণেই মূলত ১৪ দলের কার্যক্রম নেই। লকডাউনে তো তারা কাজ করেছে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেটা করতে গিয়েই তো ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এরপর ভার্চুয়াল সভা হয়েছে, ১৫ আগস্টের সভা ও মোহাম্মদ নাসিম স্মরণে শোকসভাও হয়েছে। এছাড়া তো আর কোনো কার্যক্রম নেই।’

চলতি বছরের গত ১৩ জুন মারা গেছেন ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। মূলত আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৪ দলকে আগলে রাখতেন। এক রকম নাসিমকে ঘিরেই ছিল নেতাদের যোগযোগ ও সব কার্যক্রম। বিভিন্ন ইস্যুতে নানা কর্মসূচি, বক্তৃতা-বিবৃতি নাসিমের নেতৃত্বেই দেওয়া হতো। করোনায় ১৪ দলের মুখপাত্র বর্ষীয়ান রাজনীতিক মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পরই মূলত ১৪ দলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যদিও নাসিমের মৃত্যুর পর এ বছরের জুলাই মাসের শুরু দিকেই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুকে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা কাগুজেই রয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম দেখেননি শরিক দলের নেতারা। ১৪ দলের শীর্ষ নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া খোলা কাগজকে বলেন, ‘নাসিম সাহেব মারা যাওয়ার পর কোনো মিটিং হয়নি। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে শুধু একটা ভার্চুয়াল শোকসভা হয়েছে। আর কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। কোনো যোগাযোগ নেই। ১৪ দলের এখন কোনো ফাংশন নেই।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা খোলা কাগজকে বলেন, ‘নিকট অতীতে কোনো সভা হয়নি। কোনো সভা হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি না। মূলত নাসিম সাহেব মারা যাওয়ার পর ১৪ দল ডিসফাংশনাল হয়ে গেছে। সমন্বয়ক বা মুখপাত্র কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’

জোটের শীর্ষনেতা, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘১৪ দলে আশানুরূপ ফাংশন নেই। তবে এখন করোনার কারণেও ফাংশন করা মুশকিল।’

এ বিষয়ে ১৪ দলের নয়া সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সঙ্গে কথা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘হয়তো সড়কে সভা-সমাবেশ করা হয়নি। তবে ভার্চুয়াল কার্যক্রম আছে। ভার্চুয়ালি তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। নেত্রীর (শেখ হাসিনা) জন্মদিন ও ২৫ আগস্ট উপলক্ষে ওয়েবিনার করেছে তারা।’

প্রসঙ্গত, ২৩ দফার ভিত্তিতে ২০০৪ সালে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়। এই জোট তখন বিএনপি-জামায়াত সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছিল। ২০০৮ সালে আরও কয়েকটি দল যুক্ত হয়ে সেটা মহাজোটে রূপ নেয়। এ জোটের নেতৃত্বে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে মহাজোট। যদিও এ জোট থেকে নানা সময় অনেক দল বেরিয়েছে, যুক্তও হয়েছে। তবে মহাজোটের ভাঙ্গা-গড়া ভোটের রাজনীতিকে ঘিরে হলেও ১৪ দল এখনো অটুট রয়েছে।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ১৪ দলকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়। এরপর ২০১৪ সালে গঠিত সরকারেও ছিলেন তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে আওয়ামী লীগ পাঁচটি আসন ছেড়ে দেয়। জাসদ পায় দুটি এবং বাংলাদেশ জাসদ পায় একটি আসন। তবে এবার (২০১৯) শরিক দলের কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি।

 
Electronic Paper