ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পিক থেকে তুলকালাম

সৈয়দা ইয়াসমিন আরা
🕐 ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৯

বাসার সামনে রাস্তা ব্লক করে ৩-৪টি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়ানো আর কতিপয় মানুষের জটলা। সেখানে পরিচিত মুখও আছে। একজন আমাকে দেখে ছুটে এলো। শোনা কথা এই- আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নীলার চাচিকে প্রথমে পুলিশ ধরেছে, এরপর এমন মার দিয়েছে, নাক-মুখে রক্ত ছুটেছে! মরণাপন্ন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স এসে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে, অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের মানুষ চাচির মরণচিৎকার শুনতে পেরেছে।

ভেবে কূল পাচ্ছি না, আমেরিকার মতো দেশে যেখানে মেয়েদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়, অসম্মান করে কিছু বললেও শাস্তি পেতে হয়। সেখানে পুলিশ একজন বয়স্ক মহিলাকে মেরে নাক মুখ দিয়ে রক্ত ছুটিয়ে দিয়েছে! যারা কি-না বড় বড় দাগী আসামিকেও সৌজন্যতার সঙ্গে স্যার/ম্যাডাম বলে সম্বোধন করে!

কিছুক্ষণ পর নীলা এলে দুজনে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। পথেই দুজনে আলোচনা সেরে নিলাম, পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাব। এত বড় সাহস কীভাবে হলো, হোক চাচির যত বড় অপরাধ। তাই বলে ওনাকে মেরে আধমরা করবে! মেনে নেওয়া যায় না এমন অনাচার। হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমেই ইমারজেন্সিতে খোঁজ নিলাম। জানা আছে, প্রথমে এখানেই চাচিকে আনা হবে। চাচিকে খুঁজতে বেশি বেগ পেতে হলো না। চারপাশ ঘিরে ডাক্তার নার্স গিজগিজ করছে। আমি ও নীলা ইমারজেন্সিতে গিয়ে বহু কষ্টে অনুমতি পেলাম চাচির কাছে যাওয়ার। এতে ডাক্তার-নার্সরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কারণ চাচি একটি ইংরেজি শব্দও জানেন না।

ডাক্তাররা যা-ই জিজ্ঞাসা করছে, উনি কিছুই বলতে পারছেন না, সমানে কেঁদে যাচ্ছেন। নীলাকে দেখে চাচি আরও জোরে কেঁদে উঠলেন। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, চাচির সুগার লেবেল অনেক বেশি। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিদিন প্রচুর হাঁটাহাঁটি করতে। দেশে থাকতে উনি সকালে পাড়াময় হেঁটে বেড়িয়েছেন। এখানেও তাই করতে বেরিয়েছিলেন। শুধু জানা ছিল না দেশের আর এখানকার আইন ব্যবস্থা।

আজ সকালে উনি যখন বেরিয়েছিলেন, ফুরফুরে মনে এদিক-ওদিক হাঁটছিলেন। মুখের ভেতর ছিল পানে ঠাসা। আয়েসিভাবেই চিবুচ্ছিলেন। চিবানোর জন্য মুখ ভরে উঠে ছিল পানের রসে। এমন সময় রাস্তায় দুজন পুলিশের মুখোমুখি হওয়াতে, পুলিশ দুজন চাচিকে সৌজন্য হিসেবে হাই বললেন। চাচিও আধুনিক কায়দায় হাই বলতে গিয়ে লাল টুকটুকে কিছু পানের পিক মুখ বেয়ে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ দুজন তা দেখে বিস্মিত হলো।

ওদের বিস্ময় কাটার আগেই চাচি পুরো পানের পিক পিচকারির মতো পুলিশের সামনেই ছপাৎ করে মাটিতে ছিটিয়ে দিলেন। ফেলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দুজনের মাথা খারাপ! তারা ভেবেছে চাচির ভয়ানক অবস্থা। ভবলীলা সাঙ্গ করতে যাচ্ছেন। তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে চাচিকে দুই পাশ থেকে ধরে ফেললেন। চাচি ঘটনার আকস্মিকতায় সম্পূর্ণ বেকুব! পুলিশ দুজন হাই বলেছে, উনি তো তাই বলেছেন। তাহলে এরা এমন করে তাকে ধরল কেন?

উনি যেহেতু ইংরেজি বলতে পারেন না। বাবাগো, মাগো বলে চেঁচাতে তো পারেন! সমানে চেঁচামেচি আর গালি পাড়ছেন। পুলিশ বেচারা ভেবেছিল, এটা যন্ত্রণারই প্রকাশ! বিলম্ব না করে অ্যাম্বুলেন্স কল করে চাচিকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে...!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper