ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফুলবাড়ী রেলষ্টেশনে আসন সংকট, দুর্ভোগে যাত্রীরা

মোকাররম হো‌সেন, ফুলবাড়ী
🕐 ৮:২১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২

ফুলবাড়ী রেলষ্টেশনে আসন সংকট, দুর্ভোগে যাত্রীরা

দিনাজপুরের অন্যতম এক‌টি প্র‌সিদ্ধ উপ‌জেলা ফুলবাড়ী। গুরুত্বপূর্ণ এ উপ‌জেলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় র‌য়ে‌ছে ২৯বি‌জি‌বি সদর দপ্তর, বড়পুকু‌রিয়া কয়লাখ‌নি, বড়পুকু‌রিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মধ্যপাড়া ক‌ঠিন শিলা খ‌নি, স্বপ্নপুরীসহ নানা স্থাপনা। ভৌ‌গো‌লিক কার‌ণে ক‌য়েক‌টি উপ‌জেলার মানু‌ষের বি‌ভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ট্রেন। তাই ফুলবাড়ী রেল‌ষ্টেশ‌নে প্র‌তি‌নিয়তই টি‌কিট সংক‌টে পড়‌ছে যাত্রীরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকাগামী অন্তঃনগর নীলসাগর, দ্রুতযান, একতা এক্সপ্রেস এবং আন্তঃনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, বাংলাবান্দা এক্সপ্রেস, সীমান্ত/রুপসা এক্সপ্রেস সহ অন্যান্য ট্রেন এই রুটে চলাচল করে থাকে। ফুলবাড়ী রেলষ্টেশন দিয়ে চলাচলরত এসব ট্রেনে চাহিদার তুলানায় আসন সংখ্যা কম থাকায়, চাহিদা পুরণ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ছেন এই এলাকার যাত্রীরা। তাই আসন বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী সহ সাধারণ মানুষ।

২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী, এই উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৩ জন। শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২০৮টি, এনজিও ৩৫টি, বীমা ৮টি ও সরকারী একটি বেসরকারী মিলে ১০টি ব্যাংক রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা পরিসংখ্যান তদন্ত কর্মকর্তা মিথুন কুমার সরকার। এছাড়াও ফুলবাড়ী উপজেলার পা‌শেই রয়েছে একটি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্র, দেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি।

এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ফুলবাড়ী রেলষ্টেশন দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। উত্তরব‌ঙ্গের সর্ববৃহৎ বেসরকারী বি‌নোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে দে‌শের বি‌ভিন্ন প্রান্ত থে‌কে ভ্রমণ পিয়াসীরা ট্রেন যো‌গে বেড়া‌তে আ‌সেন। গুরুত্বপুর্ণ এই রেল ষ্টেশনে পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা বরাদ্দ না থাকায় ভোগা‌ন্তির শেষ নেই যাত্রীদের। আসন বাড়িয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি উঠলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহসাই এটি পূরণ হচ্ছে না।

ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানাগেছে, ঢাকা গামী অন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে স্থানীয় যাত্রীদের জন্য শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) শ্রেণির জন্য অনলাইনে পাঁচটি এবং অফলাইনে পাঁচটিসহ শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে দশটি এবং অফলাইনে দশটি আসন বরাদ্দ রয়েছে। একইভাবে ঢাকাগামী আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে শুধুমাত্র শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে ১৩টি ও অফলাইনে ১৩টি এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। তবে একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথম শ্রেণি কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার জন্য কোন আসন বরাদ্দ নেই এই রেলষ্টেশনে।

এছাড়া ফুলবাড়ী থেকে রাজশাহী গামী আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন শ্রেণির অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি, বাংলাবান্ধা ও তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন দুইটিতেও শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এই তিনটি অন্তঃনগর ট্রেনেও এখান থেকে প্রথম শ্রেণি কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার কোন আসন বরাদ্দ নেই। অনুরুপভাবে খুলনা গামী আন্তঃনগর রুপসা এক্সপ্রেস ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে শুধুমাত্র শোভন শ্রেণির জন্য অনলাইনে ১৫টি এবং অফলাইনে ১৫টি করে আসন বরাদ্দ রয়েছে। এই দুইটি ট্রেনেও প্রথম শ্রেণি কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার কোন আসন বরাদ্দ নেই।

ফুলবাড়ীর ব্যবসায়ী আমীর হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও রমজান আলী বলেন, ব্যবসার কাজে প্রায়ই ঢাকা যাতায়াত করতে হয় তাদের। অনেক সময় অনলাইনে টিকিট না পেয়ে, স্টেশনে গিয়েও টিকিট পাওয়া যায় না। এতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। তাই তারা ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

মুজা‌হিদুল ইসলাম না‌মের এক যাত্রী বলেন, ফুলবাড়ীতে আসন বরাদ্দ কম থাকায় টিকিট পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে কালোবাজারীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনতে হয়। একই কথা জানিছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরাও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।

স্টেশন মাস্টার ইস্রাফিল সরকার জানান, আসন বরাদ্দ কম হওয়ায় টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রীদের ফিরে যেতে হয়। সে কারনে ফুলবাড়ীতে প্রত্যেকটি ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ট্রেনের যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ কমাতে ট্রেনগুলোর আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, ফুলবাড়ী রেল ষ্টেশন দিয়ে ফুলবাড়ীসহ পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের একাংশের মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়াও এই উপজেলার পার্শ্ববর্তী কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনি রয়েছে।

সে কারণে এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ রেল ষ্টেশন।তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ফুলবাড়ীতে প্রত্যেকটি ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রথম শ্রেণি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত(এসি) কামরা জন্য কতৃর্পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আসন বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক আসীম কুমার তালুকদার জানান, ফুলবাড়ীর আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন এ ব্যপারে আমরা সচেতন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কোচের সমস্যা, নতুন কোচ তৈরী করারও সামর্থ্য নেই।

অতিরিক্ত কোচ না থাকায় নতুন করে কোচ সংযোজন করাও সম্ভব হচ্ছেনা। বর্তমানে ১৩টি করে কোচ রয়েছে। কোচ বাড়ানো ছাড়া কোঠা বাড়ানোও সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে কোচ বাড়ানোর ব্যবস্থা হলে আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

 
Electronic Paper