ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ

আন্দোলনের ডাক বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
🕐 ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৩, ২০২১

আন্দোলনের ডাক বিএনপির

উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজপথ। নেতাকর্মীদের নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা ময়দান সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশে অনুষ্ঠিত বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। 

তিনি বলেন, অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এ আন্দোলনে সবাইকে শামিল হতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে প্রস্তুত আছি। জীবনের শেষবিন্দু রক্ত দিয়ে হলেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমি আছি। সবাই প্রস্তুতি নিন। টুকু বলেন, দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। ফরিদপুরের ছাত্রলীগ সভাপতিই দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তাহলে রাঘববোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে তার হিসাব দেশের জনগণ নেবে। তিনি বলেন, পুলিশ এখন সরকারি দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে রাজপথে। এবারও রাজপথেই ফয়সালা হবে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমরা সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন দেখতে পাব। এর জন্য ঢাকার রাজপথে রক্ত দিতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামে আন্দোলন করে কিছু হবে না। ঢাকাকে সুসংগঠিত করতে হবে।

লাঠি লাগে, অস্ত্র লাগে সব নিয়ে আমরা প্রস্তুত হব: এমপি হারুন
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসনের এমপি হারুন-অর রশিদ বলেছেন, আমি পার্লামেন্টে যোগদান করেছি। আমি জাতির উদ্দেশে বলে দিতে চাই, যে মুহূর্তে তারেক রহমান বলবেন, সেই মুহূর্তে অবৈধ সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসব। আপনারা শুধু প্রস্তুত হোন যুদ্ধের জন্য। লাঠি লাগে, অস্ত্র লাগে, যা কিছু লাগে তাই নিয়ে আমরা প্রস্তুত হব, ইনশাআল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী মহানগরীর মাদ্রাসা ময়দান সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশে বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

হারুন-অর রশিদ বলেন- এই রাজশাহী আমার প্রাণ, রাজশাহীতে আমার জন্ম, এই রাজশাহী আমার বেড়ে ওঠার স্মৃতি, এই রাজশাহী আমার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। এই রাজশাহী আমার রাজনীতি, এই রাজশাহী আমার অধিকার। এমপি হারুন বলেন, সমাবেশ থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। সোমবার রাজশাহীর চারদিকে বাস-ট্রাক সমস্ত কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি বিস্মিত হয়েছি। যখন আমি সকালে রওনা দিয়েছি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই পুলিশ বাধা দিয়ে বলে যেতে দেওয়া যাবে না। আমি বলেছি, আমাকে গ্রেফতার করতে হবে, আর না হলে আমি যাবই। এরপরে গোদাগাড়িতে বাধা দিয়েছে। রাজাবাড়ীতে এসে দেখলাম শত শত মানুষ গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। যারা ডাক্তারের কাছে আসতে চায়, হাসপাতালে আসতে চায়। সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে এই সরকার। তিনি বলেন, এই সমাবেশ হচ্ছে লুটেরাদের উৎখাত করার সমাবেশ। এই সমাবেশ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আমাদের সমাবেশ। এই সমাবেশ হচ্ছে দেশে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার সমাবেশ।

এমপি হারুন বলেন, মানুষ আগুন হয়ে আছে। নির্বাচনের নামে কী প্রহসন হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের অন্য কোনো জায়গার কথা বলব না। যে মাটিতে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করছি। প্রথম ধাপে নির্বাচন হয়েছিল কাটাখালী পৌরসভায়। সেখানে আমাদের মেয়র প্রার্থী সিরাজুল। লজ্জা লাগে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছে ১৭ হাজার ২৪০ ভোট আর বিএনপির প্রার্থী পেয়েছে মাত্র ৭৬ ভোট। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

তিনি বলেন, আরেকটি পৌরসভা হচ্ছে চাটমোহর। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছে ১৭ হাজার ২৫২ ভোট আর বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষে পেয়েছে ৮৫ ভোট। এটা কি বিশ্বাস করা যায়? এই সরকারের অধীনে কি আর ভোট করা যায়? ইভিএম চলবে না। এই সরকারের অধীনে ভোট চলবে না। এমপি হারুন আরও বলেন, আমরা এখনো যারা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করতে সুড়সুড় করছি। কোনো লাভ হবে না। পঞ্চম ধাপের পৌরসভায় চারঘাটের নির্বাচনী কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ হয় নাই?কারা করেছে বোমা বিস্ফোরণ? এরপরও কি আমাদের নির্বাচনে যেতে হবে? তিনি বলেন, আমি রাজশাহীর মাটিতে পরিষ্কারভাবে পুলিশ ভাইদের বলে দিতে চাইÑআগামী ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ খুলবে।

প্রস্তুত হোন।পুলিশের ছেলে যারা, যারা বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে পড়ালেখা করে। তাদেরকে মিছিলের সামনে আমরা নেব। দেখি পুলিশের লাঠি তাদের গায়ে পড়ে কি না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এমপি হারুন বলেন, আপনারা তাদেরকে (পুলিশের ছেলে) চিহ্নিত করবেন। তাদেরই আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের কাতারে আমরা নিয়ে আসব। তিনি বলেন, পুলিশ ভাইদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা এ দেশের সন্তান। আইন, সংবিধান অনুযায়ী আপনারা চলবেন। পুলিশ কমিশনার, আইন আপনাকে দিয়েছে? কোন আইনে আপনি রাজশাহীর এই সমাবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন? এমপি হারুন বলেন- ধন্যবাদ সবাইকে, ধন্যবাদ রাজশাহীর সংগ্রামী জনতা। আপনারা প্রস্তুত হোন। রাজশাহী থেকে আমরা আন্দোলনের দাবানল সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব, ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। এছাড়াও বক্তব্য দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সামসুল হক প্রামাণিক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে বিভাগের আট জেলার সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেন। এদিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত গত সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও তারা বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশে আসেন। দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা সমাবেশে যোগ দেন। পথে পথে পুলিশ সদস্যরা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের শরীর তল্লাশি করে।

সমাবেশকে ঘিরে রাজশাহীতে সতর্ক অবস্থায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সমাবেশস্থলে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল জলকামান, এপিসি যান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি করে গাড়ি।

 
Electronic Paper