ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে বিএনপিতে জাপা নেতা!

মাহমুদুল হাসান
🕐 ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১

নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে বিএনপিতে জাপা নেতা!

গুঞ্জন চলছে কয়েক দিন ধরেই। বিএনপির তৃণমূল নেতারা শুরুতে আমলে নেননি। আলোচনা হয়নি দলীয় ফোরামেও। ছিল না কোনো হাঁকডাকও। সব ‘আয়োজন’ চলে পর্দার অন্তরালে। বাকি ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। এর মধ্যেই অনেকটা আকস্মিকভাবেই অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হলেন নীলফামারী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় সাবেক হুইপ এবং জাতীয় পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট শওকত চৌধুরী।

শুধু তাই নয়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে তিনি বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও পেয়েছেন। সবই নাকি হয়েছে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে। তবে দলছুট নেতার দলে জায়গা নিয়ে সৈয়দপুর স্থানীয় বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও তাদের মধ্যে অন্তর্দাহ শুরু হয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, তৃণমূল নেতাকর্মী বা কমিটির সঙ্গে আলোচনা না করেই দলছুট নেতাকে আবারও দলে ফেরানো হলো। আবার তাকে পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নও দেওয়া হলো। এতে দলের নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ। এতে মূলত দলের অভ্যন্তরে বিভেদ তৈরি হলো।

তবে সৈয়দপুর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেছেন, হাইকমান্ডের নির্দেশেই শওকত চৌধুরী দলে যোগ দিয়েছেন। এখানে বিএনপির জেলা কমিটির কোনো যোগসূত্র নেই। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার দু-একজন নেতা গত বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শওকত চৌধুরীর যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। এদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে শওকত চৌধুরী বিএনপিতে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গফুর সরকার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ, রংপুর জেলা বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

এ সময় শওকত চৌধুরীকে বরণ করে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শওকত চৌধুরী সাহেবকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আশা করি, যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে, সৈয়দপুরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তার নেতৃত্ব দেবেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, শুধু শওকত চৌধুরী নন, বর্তমানে অনেক মন্ত্রী-এমপিও বিএনপিতে যোগদানের জন্য লাইন ধরে আছেন। মানুষ যদি একটু কথা বলার সুযোগ পান, একটু রাজনীতি করার সুযোগ পান, তাহলে অনেকেই বিএনপিতে যোগদান করবেন।

এদিকে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা জানান, শওকত চৌধুরীর বিএনপিতে যোগদান নিয়ে সৈয়দপুর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। দুর্নীতিবাজ ১০০ জনের তালিকায় যার নাম এসেছে, তাকেই আবার দলে নেওয়া হয়েছে। হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়েই শওকত চৌধুরীকে দলে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে শওকত চৌধুরীর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ গ্রহণ ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হয়। ফলে তিনি ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এরপর থেকে তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এরপরও তিনি কেন বিএনপিতেÑ প্রশ্ন রাখেন অনেকে।
সৈয়দপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত হায়াত শাহ দৈনিক খোলা কাজগকে বলেন, শওকত চৌধুরীর বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারা অন্ধকারে। আহ্বায়ক কমিটির কোনো সাংগঠনিক সভা ছাড়াই তাকে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গফুর সরকার দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সাংগঠনিক কোনো সভায় শওকত চৌধুরীর যোগদানের বিষয়টি আলোচনা হয়নি। অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার (বিএনপি নেতা) মারা যাওয়ার পর বিএনপিতে সিনিয়র ঘাটতি দেখা দেয়। শওকত চৌধুরী বিএনপিতে আসায় সেই শূন্যতা পূরণ হবে। তিনি বলেন, কারও দুর্নীতির দায় বিএনপি নেবে না। তিনি যদি কিছু করে থাকেন, তা জাতীয় পার্টিতে থাকতে করেছেন। বিচারের জন্য আইন-আদালত আছে। এখানে বিএনপির কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। দলে নেওয়ার বিষয়ে সবাই যে একমত হবেন তাও নয়। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ বড় একটা অংশই একমত।

আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব শাহীন আক্তার দৈনিক খোলা কাজগকে বলেন, হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শওকত চৌধুরী বিএনপিতে ফিরেছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি বিএনপি যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শওকত চৌধুরী দৈনিক খোলা কাজগকে বলেন, আমি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করি। জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করেছি। মনোমালিন্য হওয়ায় বিএনপি ছেড়ে চলে যাই। জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু আমাকে ২০১৮ সালে পার্টি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমি তিন বছর জাপার রাজনীতিতে জড়িত নই। তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আগে যেহেতু বিএনপি করেছি সেজন্য আবারও বিএনপিতে ফিরে এসেছি। আগেও এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই। দুর্নীতির তালিকায় নিজের নাম থাকা প্রসঙ্গে শওকত চৌধুরী বলেন, এ তালিকায় আমার নাম ভুল করে আসছে। আমার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমার লোনও ১০০ কোটি টাকার নিচে। আমি কোনোভাবেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমি মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।

 
Electronic Paper