ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে

শামীম আল-মামুন
🕐 ৮:৪৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০

শিক্ষা কথাটি শুনলেই কেমন যেন অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন চাপে। কিন্তু যখনই বলা হয় শিক্ষাব্যবস্থা তখনই বিষয়টা হয়ে যায় অন্যরকম, মনে পড়ে যায় একটি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক সব শিক্ষাব্যবস্থার কথা। অনেকদিন ধরেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছপরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু নানান বাধার মুখে পড়ে চালু করতে পারছে না এ পদ্ধতি।

কতটা সফলতার সঙ্গে চলতে পারে এ পদ্ধতি তাই নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষে গেলেও দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বিপক্ষে। তাই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকের আশঙ্কাও রয়েছে। এ পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীরা যেমন পাবে অনেক সুবিধা তেমনিভাবে ঘটতে পারে অসুবিধাজনক কিছু ঘটনাও। এ পদ্ধতির সুবিধা অসুবিধাগুলোই এখন আমাদের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িযেছে। যেমন বর্তমান সময়ে একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে অনেক কষ্ট করে যেতে হয় দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

অনেকে হয়ত পরীক্ষার জন্য অ্যাপ্লিকেশন করেও টাকাকড়ি না থাকায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যায় না। আবার হঠাৎ করেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে অনেক সময় রাস্তাঘাট চিনতে না পেরে পড়ে যায় বিপাকে। আবার অনেকের হয় রাতে থাকার টেনশন, অনেকেই আবার ভ্রমণের ফলে হয়ে পড়ে অসুস্থ, আবার অনেক শিক্ষার্থী খুঁজে পায় না এক্সাম হল, বিশেষ করে মেয়েদের পড়তে হয় আরও বিপাকে। আমাদের দেশের মেয়েদের সাধারণত পরিবারের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতে দেওয়া হয় না। এতে করে দেখা যায় অনেক মেধাবী মেয়েদের ইচ্ছা থাকলেও উপায় হয়ে ওঠে না। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ফরমের দাম ভিন্ন হওয়ার কারণে ফর্ম বাবদও অনেক টাকা খরচ করতে হয় পরীক্ষার্থীদের। এসবের বাইরেও আছে অনেক ঝামেলা। যেমন এ পদ্ধতি থাকার কারণে এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলে যেতে চায় না তেমনি এ কারণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকে স্থানীয়দের প্রভাব। এ প্রভাবের কারণে যেমন একদিকে প্রভাবিত হতে পারে শুদ্ধ ভাষা শিক্ষা অপরদিকে সৃষ্টি হতে পারে দলগত প্রভাবের মতো সমস্যা।

অন্যদিক যদি দেখা যায় তাহলে পদ্ধতিটি তৈরি করতে পারে একটি নতুন যুগের সূচনা। কমতে পারে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি। কমতে পারে অযথা টাকা খরচ। দূর হতে পারে যাতায়াত সমস্যা। সমাধান হতে পারে আঞ্চলিকতা সমস্যাদির। কমতে পারে স্থানীয়দের প্রভাব। দূর হতে পারে থাকা এবং পরীক্ষার হল খোঁজাখুঁজি করার চিন্তা। বাড়তে পারে মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ। হতে পারে সহজে অনেককিছুর সমাধান। কিন্তু ঘটতে পারে মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং অনুসারে মেরিট করার কারণে তৈরি হতে পারে বৈষম্য। কারণ প্রথম দিকে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবে প্রথম দিকের শিক্ষার্থী আর এভাবে মেরিট অনুসারে সাজালে বিপাকে পড়তে পারে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরাই বেশি থাকবে, থাকবে না ভালো-খারাপের মিশ্রণ। এতে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এখন যেমন একজন ছাত্র কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থতাজনিত কারণে পরীক্ষা মিস করে চান্স না পেলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায় তখন সুযোগটি হাতছাড়া হতে পারে। ঘটতে পারে বড় ধরনের টাকার লেনদেন। গুচ্ছ পদ্ধতিভিত্তিক পরীক্ষার কারণে ঘটতে পারে স্বজনপ্রীতির মতো ঘটনা। প্রতিষ্ঠানের দিক বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হারাতে পারে তাদের আয়ের বড় উৎস।

শামীম আল-মামুন, শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper