ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাজেটে জীবন-জীবিকার স্বচ্ছ রূপরেখা নেই: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ০৪, ২০২১

বাজেটে জীবন-জীবিকার স্বচ্ছ রূপরেখা নেই: সিপিডি

নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্প ও গতানুগতিক অর্থনীতির জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকলেও মূল প্রতিপাদ্য ‘জীবন-জীবিকা’ রক্ষার ‘স্বচ্ছ্ব রূপরেখা’ দেখছেন না সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।
শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রস্তাবিত বাজেট ২০২১-২২ পরবর্তী পর্যালোচনায় সিপিডি এ মত দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবার অর্থনীতির প্রায় সকল জায়গায় স্বস্তির একটি জায়গা থেকে বাজেট দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু দুর্বল অনুমিতির ওপর প্রাক্কলন বাজেটকে কাঠামোগত দুর্বল করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, এ বাজেটকে কোভিডকালীন বাজেট বলা হলেও স্বাস্থ্য বা শিক্ষা খাতে তার প্রতিফলন তারা দেখছেন না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা বা মহামারীতে যারা নতুন করে দারিদ্র্যে পড়েছে,তাদের বিষয়েও বাজেটে ‘তেমন কিছু নেই’।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা আছে, তাতে কর্মসংস্থান তৈরি করার পরোক্ষ একটি চেষ্টা হয়ত আছে, কিন্তু পরোক্ষ চেষ্টায় অর্থনীতিতে ‘বড় ধরনের চাঞ্চল্য’ সৃষ্টি করা যায় না।
তার ভাষায় এ বাজেটে প্রয়োজনীয় কিছু উদ্যোগ থাকলেও তা ‘যথেষ্ট নয়’।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। উল্টো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি খাতকে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তাতে করে তারা কি বিনিয়োগে আসবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করা উচিত ছিল সরকারের। কারণ সাধারণ মানুষের হাতে টাকা দিলে তারা সেটা খরচ করতেন, এতে অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসত।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘জীবন ও জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে’ শিরোনামে যে বাজেট উত্থাপন করেছেন, তাতে শিল্প ও বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়ে কর আদায় ও রাজস্ব খাতে বেশ কিছু সংস্কারের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্লেষক মহল থেকে বাজেট নিয়ে যেসব মন্তব্য এসেছে সবাই এই বাজেটের লক্ষ্যের সঙ্গে কর্মসূচির ফারাক নিয়ে সন্দেহের কথা তুলে ধরেছেন।

ফাহমিদা খাতুন সামগ্রিক বাজেটের সারসংক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘জীবন জীবিকার কথা বলা হলেও কৃষি, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বরাদ্দে দেখছি না। সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামো বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। কোভিডে অর্থনীতির যে ক্ষতিটা হল, পিছিয়ে গেলাম- সেটা ‍পুষিয়ে আনার জন্য কী কাজ করব আগামী ৩/৪ বছরে, তার কোনো নির্দেশনা নেই। এখানে মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা দরকার ছিল। বাস্তবায়নের সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা দেখতে পাচ্ছি না।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, মহামারীর ক্ষতি পোষাতে সরকার যে ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে, তার ৮০ শতাংশ ঋণ নির্ভর, বাকিটা রাজস্ব সহায়তা। এখন মানুষের হাতে আয় নেই। তাই রাজস্ব থেকে বেশি দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণের বিষয়ে বাজেটে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় রাজস্ব আহরণ ১০.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে কতটুকু সম্ভব হবে, সে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে সিপিডি পর্যালোচনায় দেখতে পায় রাজস্ব আহরণ ৩০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৯.৬ শতাংশ। বলা হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা হবে। ব্যয় ঠিক করে আয়ের চিন্তাধারা থেকে এনবিআরের ওপর রাজস্ব আদায়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। যা আসলে অর্জন করা সম্ভব হয় না।

প্রস্তাবিত বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রশংসা করলেও সামগ্রিকভাবে সাধারণ করদাতাদের জন্য করে ছাড় দেওয়ার ওপর জোর দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

 
Electronic Paper