ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাড়ছে পানি বাড়ছে আতঙ্ক

ডেস্ক রিপোর্ট 
🕐 ৯:৫৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০২০

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। দেশের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, ঝিনাইসহ অনেক নদীতে বিপদসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন অঞ্চল হচ্ছে প্লাবিত, পানিবন্দি হচ্ছে মানুষ। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছে। এতে বেড়েছে দুর্ভোগ।

বিশেষ করে মানুষের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদীর পানি বাড়ায় বেড়েছে নদীভাঙন, নদীতে বিলীন ঘর-বাড়ি-জমি। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হেক্টর হেক্টর ফসলী জমি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নদীভাঙন রোধ ও বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় তারা প্রস্তুত। প্রতিনিধিদের খবরে বিস্তারিত

রাজবাড়ীতে বাড়ছে পদ্মার পানি, বাড়ছে মানুষের আতঙ্ক। প্রতিদিনই কয়েক সেন্টিমিটার করে বাড়ছে পানি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও নদী পাড়ের হাজারো পরিবার। নদীভাঙনের আশঙ্কায় তারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত এক দশক ধরে নদীভাঙনের শিকার এসব মানুষ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদি ভাঙনরোধে অগ্রিম কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে এ বছরও নদীতে তলিয়ে যাবে অনেক গ্রাম।

তিস্তার পানি ফের বৃদ্ধি পেতে শুরু করায় রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তার ভাঙনে গত ৪ দিনে উপজেলার হাগুরিয়া হাশিম এলাকার প্রায় অর্ধশত বাড়ি নদীতে চলে গেছে। গতকাল দেখা যায়, নতুন করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীতে রয়েছে তীব্র স্রোত। স্রোতে ভাঙছে পাড়, জমি ও বসতবাড়ি। অনেকে শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব পরিবারগুলোর অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার আবেদন করা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিবছর তারা তিস্তার ভাঙনের শিকার হচ্ছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, তিস্তার ভাঙন রোধে বরাদ্দের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে নদনদীর পানি। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঘরে ফিরতে পারছে না বানভাসীরা। দেড় সপ্তাহ যাবৎ বন্যার পানি অবস্থান করায় দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসাসহ জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট। এছাড়াও কৃষিতে আউশ, আমন বীজতলা, পাট, কাউন, তিল, শাকসবজিসহ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৮৯ হেক্টর ফসলি জমি।

যমুনার পানি কমলেও এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদ-নদী গুলোর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে পানি কমলেও এখনো জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ৪ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পানি কমায় বাড়িঘর ছেড়ে এসে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বানভাসী বাড়িঘরে ফেরার চেষ্টা করছে। তবে সেখানে এখনো থাকার উপযোগী না হওয়ায় আবারও ফিরে আসছে। এদিকে বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো পানির নিচে রয়েছে। পানিবন্দি দুর্গত মানুষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

উজানের সঙ্গে যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ জেলায় এনায়েতপুরের ঘাটাবাড়ি ও পাকুরতলায় ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। পাউবো থেকে সেখানে অস্থায়ী জরুরি প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ভাঙন কোনোভাবেই থামছে না। থেমে থেমে ভাঙনে মানুষজন ক্রমেই বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এদিকে, ভাঙন ঠেকাতে করোনার মধ্যে সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে নদী পাড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন অসহায় মানুষজন। জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের নিকট দাবি তাদের। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ৬৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে তীর রক্ষা প্রকল্প পাস হলে ওই অঞ্চলে ভাঙন প্রতিরক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। প্রকল্পটি প্রি-একনেক হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে থমকে রয়েছে।

নোয়াখালীর বিচ্ছন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ৪ দিন যাবৎ উপজেলার মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষা চর ঈশ্বর, সুখ চর, নলচিরা ও নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে আকস্মিকভাবে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ১৫ গ্রামের ১০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে এসব এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ২৯ সেন্টিমিটার আর ধলেশ্বরীর পানি বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ছয় উপজেলায় এক লাখ ২৪ হাজার ৫৭১ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে তিন হাজার ৬১৩ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় ৩০০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও আট লাখ টাকার চাহিদা রয়েছে। রোববার (০৫ জুলাই) পর্যন্ত ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার।

 
Electronic Paper