ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জনপ্রতি ক্ষতিপূরণ ৩ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:১৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০১৯

‘সিডর’ ও ‘আইলা’র পর সম্প্রতি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দেশে আঘাত হেনেছে। সুন্দরবনের কারণে ব্যাপক আকারের ক্ষয়ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। তবুও বুলবুলের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলে ২ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়হীন হয়েছে ৪৮ হাজার পরিবার। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে খুলনা জেলা প্রশাসন বরাদ্দ দিয়েছে ৮ লাখ টাকা, যা মাথাপিছু তিন টাকারও কম। এছাড়া চাল বরাদ্দ দিলেও এখন পর্যন্ত তা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছেনি।

খবর বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়, ত্রাণ পুনর্বাসনের তথ্যমতে, বুলবুলের তাণ্ডবে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও রূপসা উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩৭ হাজার ৮২০টি ঘরবাড়ি আংশিক ও ৯ হাজার ৪৫৫টি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে, ২৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল পানির নিচে ছিল। সাড়ে ৮শ’ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্রাণ পুনর্বাসনের সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় আড়াই লাখ টাকা করে, পাইকগাছা উপজেলায় দেড় লাখ টাকা, বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক লাখ টাকা এবং রূপসা উপজেলায় ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া রূপসা ও দাকোপ উপজেলায় ৫০ টন করে চাল, সাতশ প্যাকেট শুকনো খাবার, পাইকগাছা উপজেলায় ২৫ মেট্রিক টন চাল, দুইশ প্যাকেট খাবার, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন চাল, দুইশ প্যাকেট শুকনো খাবার, রূপসা উপজেলায় ১৫ মেট্রিক টন চাল ও একশ প্যাকেট খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির জানান, ইউনিয়নের জন্য ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তবে তা এখনো বিতরণ করা হয়নি। একশ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ১০ হাজার কাঁচা ঘর আংশিক ও ২০ হাজার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া চিংড়ি চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, জিআর’র ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা উপজেলা প্রশাসনে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এত স্বল্প পরিমাণ অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব নয় বলেও এই ইউপি চেয়ারম্যান জানান। এ ব্যাপারে খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ারদার জানান, জিআরের টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে খুলনা পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৬ হাজার ৮শ’ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৪শ’র বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে, কোথাও কোথাও আবার উপড়ে গেছে। বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ পড়ে অন্তত দুই হাজার জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ কোনো বন্যপ্রাণী মারা যায়নি। তবে ৬টি আবাসিক, ১৭টি অনাবাসিক, ১০টি জেটি ও ১৯টি নৌযানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

বনবিভাগের সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্য মতে, দুবলার চরে বাঁশ, গোলপাতা, হোগলা ও পলিথিন দিয়ে তৈরি জেলেদের অস্থায়ী কিছু ঘরের আংশিক ক্ষতির পাশাপাশি বনবিভাগের বিভিন্ন স্টেশন ও ক্যাম্পের পুরনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোংলার সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বৈদ্যমারী ক্যাম্প এলাকায় বেশ কিছু রেইনট্রি-শিরিশ গাছ উপড়ে পড়েছে।

বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বনের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহিন কবির ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঝড় হলে গাছপালার কিছু ক্ষতি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার বন বিভাগের সতর্কাবস্থার জন্যই বন ও বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতিসাধন থেকে রেহাই মিলেছে।

বুলবুলের প্রভাবে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) অধিক্ষেত্রে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে প্রবল বর্ষণে ৩১টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন সড়কে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে, প্রচণ্ড ঝড়ো ও দমকা হাওয়ায় অনেক স্থানে সাইডওয়াল ভেঙে পড়েছে ও গাছ উপড়ে পড়ে বৈদ্যুতিক তার ও পাঁচ শতাধিক এলইডি লাইট শেড অকেজো হয়ে গেছে। সংস্থার প্রকৌশলীরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও লাইট মেরামতে অন্তত ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রয়োজন। অর্থ বরাদ্দ পেলে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

 
Electronic Paper