ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজনীতি ও পেশাজীবীর জীবনধারা

গোলাম সরওয়ার
🕐 ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২১

রাজনীতি ও পেশাজীবীর জীবনধারা

বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্রের যে যুগ শুরু হয়েছে সেখানে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন কোথায় কতটুকু হচ্ছে তা আর কেউ হিসাব করে দেখার তাগিদ অনুভব করছে না। কারণ এখন মানুষের ব্যক্তিক চিন্তা আর সম্পদের একক আধিপত্যবাদের হীন বাসনার ভিত্তি যে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র তা সবাই বুঝে গেছে, যা আমাদের দেশের মানুষ কয়েক যুগ ধরেই তা অবলোকন করে আসছে। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের আদলে ভিন্নধর্মী এক তন্ত্রের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। চারিদিকে উন্নয়নের সোপান, উন্নয়ন আর জীবন মান নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাষ্ট্রচিন্তা আর গণতন্ত্রের একাল সেকাল নিয়ে ভাবার খুব একটা সময় হয় না, কারণ দেশের অর্থনীতি আজ অনেকটাই উজ্জ্বল। খাবারের নিশ্চয়তা এখন সর্বত্রই।

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। প্রোটিনের উৎপাদনও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। বলা যায় বর্তমানে খাদ্যের জোগান মানুষের চাহিদার চেয়ে অনেকটাই বেশি। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এমন, যেখানে উচ্চবর্গের মানুষের চেয়ে নিম্নবর্গের মানুষের বেশি প্রোটিন গ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা গবেষণার দাবি রাখে। এর কারণ বহুবিধ, কৃষি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন, প্রাণিজ প্রোটিনের সহজলভ্যতা ও ধনিক শ্রেণির প্রোটিন গ্রহণে অনীহা।

এমন এক সময় ছিল, যখন বড় বড় বিপ্লবীর আবির্ভাব ঘটত কেবল অন্ন আর বস্ত্রের প্রশ্নের জবাব পেতে। আর এদের শক্তির উৎস ছিল বঞ্চিত মানুষ। রাষ্ট্রের ন্যায্য হিস্যার অধিকার নিয়ে মানুষের মুক্তির পথই ছিল তাদের পথচলার অন্যতম কারণ। ক্ষুধার মঞ্চে উঠে রাষ্ট্র পরিচালনার সনদ তৈরি করত ঐ সব বিপ্লবীরা।

মানুষ আজ মনে করে এখন কোনো জনগোষ্ঠী আর রাষ্ট্র দ্বারা শোষণের শিকার হয় না। পরিবর্তে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিযুক্ত ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ যারা মানুষের কল্যাণের বিশাল অংশ হস্তগত করে মানুষকে বঞ্চিত করছে। এদের অপরিসীম লোভের বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্র এখানে অসহায়।

মার্ক্সের শ্রেণিহীন সমাজের থিওরি সে দিন ফরাসিরা গ্রহণ না করলেও সেখানে কমিউনিজমের মন্ত্র কিন্তু গ্রহণ করেছিল। গণতন্ত্রের পরবর্তী ধাপ যে সমাজতন্ত্র তা কিন্তু আমরা আজ সর্বত্রই অনুধাবন করতে শুরু করেছি। আজ সমাজে দুইটি ধারা বিদ্যমান প্রথম ধারায় আছে একটি শ্রেণি যারা অনেক বিত্তের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছে এবং এরাই দেশের সম্পদের ও ক্ষমতার অধিকারী। বর্তমানে এরা মিল, কলকারখানার মালিক এবং আপাতদৃষ্টিতে এরা মধ্যবিত্তের ভাগ্য দেবতা। আরেক প্রান্তে আছে কর্মঠ কর্মক্ষম মানুষ যারা বিত্তশালীদের বিত্তের পরিচর্যায় ন্যস্ত এদের চাওয়াপাওয়া নির্ভর করে বিত্তশালীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। অথচ এদের ছাড়া বিত্তবানরা অসহায়।

মডারেট গণতান্ত্রিক সরকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মানদ- অনুযায়ী বাজারের সরবরাহ ঠিক রাখার অন্তরালে শ্রেণির ব্যবধান কতখানি কমিয়ে সমাজতন্ত্রের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? আরও একটু খোলাসা করে বলি, একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি তিনশত টাকা। চারজনের পরিবার কল্পনা করলে তাদের দরকার পড়ে দিনে ৮০ টাকার চাল, ১২০ টাকা কেজি দরের ১/২ কেজি মাছ আর ৫০ টাকার সবজি।

এখন সরকার যদি চিকিৎসা আর বিনোদন বিনামূল্যে দিতে পারে তাহলে আমরা হয়ে উঠতে পারি ভিন্নধারার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা কমিউনিজমের প্রতিবেশীর মতো।

বর্তমান পেনডামিকে আমাদের কোনো সেক্টরই নিম্নগামী হয়নি। আমাদের উন্নয়নের দু’একটা বাদে কোনো ধাপেই থামতে হয়নি। ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু জায়গায় উন্নতিও করেছে।

গণতন্ত্রের স্বার্থপরতা আর ভোগের বৈকল্য দূর করে সীমাহীন লোভের লাগাম টানতে পারলে আমরা পেতে পারি নতুন ধারার এক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে থাকবে না মালিক-শ্রমিকের ব্যবধান, শাসক আর নাগরিকের বিশাল পার্থক্য, অবসান হবে শিক্ষার বহুমাত্রিকতা আর ধর্মের আড়ালে অশিক্ষার সব আয়োজন।

একসময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশাল অঙ্কের বাজেট থাকত তা কিন্তু বর্তমানে অনেকাংশে রহিত। মার্ক্সসবাদেও জন্মনিরোধকের কোনো কথা নেই। মানুষের ব্যবহার জানলে তা সম্পদে পরিণত করা সবচেয়ে সহজ। তাই আমাদের আজ সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত মানবসম্পদের ওপর। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর। পৃথিবীতে শারীরিকভাবে দুর্বল জাতি হিসেবে আমাদের একটা বদনাম আছে। শারীরিকভাবে দুর্বল হলে মানসিকভাবেও দুর্বল হয়। আমরা সত্য বলতে পারি না, কথার জড়তা আমাদের পেছনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আমরা ফুর্তি করতে পারি না দুর্বল বলে। শরীরের শক্তি দরকার, রোগমুক্ত করতে পারলে আমরা একদিন সাগরে ঝাঁপ দেব। আমাদের দুর্বল রেখে নীল অর্থনীতি কোনোদিনই সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে না। আমাদের মহাসড়কে চলতে পারার মতো মানুষের বড়ই অভাব কেবল স্বাস্থ্যহীনতার কারণে। কৃষিকাজে আজ মানুষ পাওয়া যায় না। এর অন্যতম কারণ শারীরিক দুর্বলতা। মানুষ আজ সহজ কাজ খোঁজে। ব্যাটারিচালিত রিকশায় ভরে গেছে দেশ, কারণ সিটের ওপরে পা তুলে দিব্যি আয় করা যায়। এতে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের কৃষি। নিরাপদ বেষ্টনি ভেঙে গেলে আমদানিনির্ভর অর্থনীতি আমাদের এই ভিন্নধারার গণতন্ত্র কতদিন টিকবে তার গবেষণা কে করবে? রাজধানীমুখিতা কমাতে দরকার শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিকতা, চিকিৎসার একরৈখিকতা আর কৃষিভিত্তিক জীবনধারায় আধুনিকতা।

আজকাল লক্ষ করা যায় দেশব্যাপী একপ্রকার সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও করপোরেটের আমলারা গ্রামীণ জনপদে শীতের সময় শীতবস্ত্র নিয়ে বিজ্ঞাপনীয় আয়োজনে প্রচারসর্বস্ব পুরাতন গরম কাপড়চোপড় বিলি করে। এসব মায়াকান্নার আড়ালে দুরভিসন্ধিমূলক তৎপরতা চোখে পড়ে। এসব তৎপরতা আমাদের কর্মবিমুখ করার জন্য অনেকাংশেই দায়ী।

আমাদের দরকার ছয় ডিগ্রি তাপমাত্রা সহনীয় উদ্যমী মানুষ। আমরা কাপড় গায়ে জড়সড়ো হয়ে মুখাপেক্ষী থেকে কী করব? শরীরের তেজ ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে, লুটতরাজের থলের হিস্যা থেকে দান নয় অধিকার আদায় করে দুর্বল স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করতে হবে।

লেখক : বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper