ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডিজিটাল ফাঁদে গরিবের ভাতা

এম.টুকু মাহমুদ, হরিণাকুণ্ডু
🕐 ৫:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২৩

ডিজিটাল ফাঁদে গরিবের ভাতা

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে শত শত বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের ভাতা ডিজিটাল কায়দায় ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি স্মার্ট প্রতারক চক্র। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে একটি প্রতারক চক্র অভিনব কায়দায় বিধবা, বয়স্কদের ভাতার টাকা তুলে নিচ্ছেন। গরিবের ভাতার টাকা খুইয়ে দিশেহারা ভাতাভোগীরা। বাদ পড়েনি স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও।

এঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন ভাতাভোগীরা।

উপজেলা সমাজ সেবা সুত্রে জানায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধি ও শিক্ষা উপবৃত্তি সমূহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে সরকার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এই ভাতা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেন। উপজেলাতে অসংখ্য ভাতাভোগী মানুষ এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। চক্রটি তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। রেহায় পাচ্ছে না স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।

উপজেলার শুড়া গ্রামের সায়েরা খাতুন জানান, তাঁর একাউন্টে গতো কয়েকদিন আগে ১৫০০ টাকা এসেছিলো। হঠাৎ একটি নম্বর থেকে সমাজসেবা অফিসের পরিচয় দেন। পরে তার ফোনে একটি এসএমএস গেছে বলে ওটিপি পাসওয়ার্ড পিন নম্বর নেওয়া হয়। তারপরে গতো বৃহস্পতিবার তিনি দোকানে গিয়ে টাকা তুলতে গেলে জানিয়ে দেন তার একাউন্টে কোনো টাকা নেই।

হরিণাকুণ্ডু পৌর এলাকাধীন আমেরচারা গ্রামের শামসুন্নাহার জানান, তিনি নিয়মিতভাবে এই ভাতার টাকা পেয়ে থাকেন। গতো ফেব্রুয়ারী মাসের ২৩ তারিখে সমাজসেবা দপ্তরের জুয়েল হোসেন নাম বলে ফোন দেন। তার একাউন্টে ঝামেলা হয়েছে বলে একটা এসএমএস দিয়ে নম্বর নেন। আমি তাকে বিশ্বাস করে নম্বরটি দিলাম। এরপর থেকে আমার মোবাইলে কোনও টাকা নেই।

শত শত বিধবা প্রতিবন্ধী, বয়স্কদের ভাতার টাকা হারিয়ে একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার দৌড়াতে থাকে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে, পৌরসভা, এবং থানাতে। হরিণাকুণ্ডু সমাজসেবা কার্যালয়ে ঐ মানুষগুলো গেলে তিনি ঘটনাটি শুনার পরে থানায় একটা অভিযোগ দিতে বলেন। অভিযোগের কপি নিয়ে আসলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।

এদিকে এমন ঘটনায় দুঃষছেন ভাতা বিতরণ কারী প্রতিষ্টনাগুলোকে এমনটাই বলছে এলাকার সুশীল সমাজ।

পৌর এলাকার শুড়া গ্রামের চিয়ারন জানান, নেছাসমাজসেবা অফিসের কথা বলে বৃহস্পতিবার আমার কাছে ০১৯৩৮-৫৩৩৪৫৬ নম্বর থেকে ফোন দেয়। তিনি আমার কাছ থেকে পিন নম্বর নেয়। পরের দিন দোকানে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি আমার ফোনে টাকা উধাও। তখন আর টাকা তুলতে পারি নি।

এই ঘটনার প্রতিকার পেতে বেশ কয়েক ভাতাভোগীরা আসেন পৌরসভার কার্যালয়ে।

এদিকে হরিণাকুণ্ডু পৌর মেয়র মোঃ ফারুক হোসেন জানান, প্রায়ই এই ধরণের প্রতারণার শিকার হয়ে এখানে অনেকেই আসেন। আমি ঐ সমস্থ সুবিধাপ্রাপ্তদের সমাজ সেবা কার্যালয়ে পাঠিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে সরকারের এই ডিজিটাল কর্মসূচী চরম বাঁধাগ্রস্থ হবে বলেও জানান এই পৌর পিতা।

সমাজসেবা কার্যালয়ের সুত্র ধরে হরিণাকুণ্ডু পুলিশ স্টেশনে খোঁজ নিলে জানা যায় ভুক্তভোগীরা এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাপ্রবাহটি নিয়ে আমরা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবহিত করেছি। ভাতা বিতরণ প্রতিষ্ঠাগুলোকে আরও স্বচেতন হওয়া দরকার ছিলো। আসলে এই ভাতা বিতরণের পূর্বে সমজসেবা অফিসের উদ্যোগে পর্যাপ্ত স্বচেতনাতামূলক কার্যক্রম চালানো উচিৎ ছিলো বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রাণী বলেন, একটি প্রতারক চক্র মিথ্যা পরিচয়ে এই সব ভাতাভোগীদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এব্যাপারে আমরা সম্বন্বয় মিটিং সহ ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেও নানাভাবে প্রচার করে থাকি। কিছু ভুক্তভোগী আমাকে মৌখিকভাবে জানালে আমি তাদেরকে আইনের মাধ্যমে অভিযোগের ফটোকপি আমাকে দিতে বলিলে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগের কপি আমার কাছে দেয়নি।

 

 
Electronic Paper