ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কেন পড়বেন আইন?

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৯:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ০২, ২০২২

কেন পড়বেন আইন?

দেশের যে কোন পেশার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে আইন৷ এ পেশায় যেমন রয়েছে পরিশ্রম তেমনি আছে সম্ভাবনা৷ আইন বিভাগে পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র, সুবিধা-অসুবিধাসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সামছুল আলম সাদ্দামের মুখোমুখি হয়ে বিস্তারিত লিখেছেন দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিনিধি ।

খোলা কাগজ- প্রথমেই জানতে চাই শিক্ষার্থীরা আইন কেন পড়বে?

সামছুল আলম সাদ্দামঃ কেউ এই প্রশ্ন করলে উত্তরের বদলে পাল্টা প্রশ্ন হবে- আইন পড়ে কী হওয়া যাবে না? বাংলাদেশে আইনের শিক্ষার্থীদেরকে পরিবারে ও সমাজে অবধারিতভাবে যে অনিবার্য প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয় তা হচ্ছে- Law পড়বি কি Liar হওয়ার জন্য? অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ ধরেই নেয়- 'ল' পড়ে 'লইয়ার' বা তাঁদের ভাষায় লাইয়ার (মিথ্যাবাদি) হওয়া ছাড়া আর বুঝি কোন গত্যন্তর নাই। কিন্তু তাঁরা আসলে জানে না আইন পড়া একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার পরিধি কতোটা বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়! আইন পেশায় ক্যারিয়ার অথবা নামের আগে বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, অধ্যাপক, ব্যারিস্টার, অ্যাডভোকেট পদবিগুলো দেখতে কার না ভালো লাগে। বর্তমানে চাহিদার কারণে তরুণদের অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন পছন্দের আইন পেশায়। দেশের প্রায় সব সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। আইন পড়ে কেউ আইনজীবী হতে না চাইলেও তাঁর জন্য সরকারি- বেসরকারি চাকুরির দুনিয়া খোলা। আইন পড়ার আরেকটি মজার বিষয় হল- আপনি স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, আইটি সহ সকল সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ছোট-বড় সব ধরনের কোম্পানীতে ই লিগ্যাল সেক্টরে চাকুরী বা পরামর্শক হিসাবে আইনের ছাত্ররা ক্যারিয়ার গড়তে পারে।

খোলা কাগজ- কোন বিভাগের শিক্ষার্থী আইন নিয়ে পড়তে পারবেন এবং কোথায় পড়া যাবে?

সামছুল আলম সাদ্দামঃ যে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী বা পেশাজীবীর আইন পড়ার সুযোগ আছে। সে বিজ্ঞানের ছাত্র হোক, মানবিক, বাণিজ্য কিংবা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের হোক না কেন। আইন বিষয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম হলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

এছাড়াও দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম হলোঃ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া আপনি চার বছর মেয়াদি এলএলবি না করেও আইন পেশায় আসতে পারেন।

এজন্য আপনাকে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ থেকে অনার্স বা ডিগ্রি পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে কোনো 'ল' কলেজে দু’বছর এলএলবি (পাস) কোর্স করতে হবে।

খোলা কাগজ- আইন পড়া একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার পরিধি কতোটা বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়?

সামছুল আলম সাদ্দামঃ এ প্রশ্নের পরিধি অনেক৷ তবে মোটা দাগে বলতে গেলে- রাজনীতি বা পলিটিক্স- পলিটিক্সে আইনের ছাত্রদের জন্য থাকে বিশেষ সুযোগ। এক সময় আমাদের সংসদের ৮০ ভাগের বেশী সিট দখলে ছিল আইনজীবীদের। এখনো আছে, তবে রাজনীতীর সেকাল এখন স্বপ্ন। আইনের ছাত্র হলেই আপনার জন্য আইন বিষয়ক সম্পাদকের আসন বরাদ্ধ! বাঘা-বাঘা নেতা-নেত্রীদের সাথে কাজ করা এবং সু-সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ পাবেন আইনপেশায়। আলাদা একটা গুরুত্ব পাবেন রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। পুলিশ-প্রসাশন সর্বস্তরে মযার্দা পাবেন পেশার খাতিরে। রাষ্ট্রের ভিতর-বাহির সব বিষয়ে চৌকস জ্ঞান পাবেন। আইনে পড়া মেয়ারা সাহসে, সর্তকতায় ও ব্যাক্তিত্বে অন্য ডিপার্টমেন্টের চেয়ে অনন্য হয়। আমাদের সমাজে যেটা এই মূহূর্তে খুব প্রয়োজন। সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত কমিশন ও প্রতিষ্ঠান দুদক, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ওয়াসা, পিডিবি, পেট্রো বাংলা, বাপেক্স সহ প্রায় সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত কমিশন ও প্রতিষ্ঠানে আইন কর্মকর্তা ও প্যানেল আইনজীবী হিসেবে আইনের ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ লাভের অবারিত সুযোগ আছে।

বিসিএসঃ আইন থেকে পাশ করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের মতোই আপনারা বিসিএস এর সমস্ত ক্যাডার যেমন- ফরেন সার্ভিস, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টম, আনসার ইত্যাদি সব নন- ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারে একজন ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। বিসিএস এর কোন নন- ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারেই নিয়োগ পাওয়ার জন্য অনার্স- মাস্টার্সের বিষয় আলাদা শর্ত নয়। আইন থেকে পাশ করে বিসিএস এর বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ লাভের উদাহরণ ভুরিভুরি।
গার্মেন্টস অডিট ও কমপ্লায়েন্স- গার্মেন্টস খাতের সাথে শ্রম আইন, নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকারের বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গার্মেন্টস কোম্পানি ও বাইয়িং হাউজগুলো এসব বিষয় অনুপুঙ্খভাবে নজরদারি করার জন্য অডিটর ও কমপ্লায়েন্স ডিভিশনে আইনের ডিগ্রিধারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। একই সাথে আইন জানে আবার কমপ্লায়েন্স ও অডিটিং ডিগ্রিও আছে- এমন প্রার্থী কোম্পানি হাতছাড়া করতে চায় না।

আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী দূতাবাস- আইনের ডিগ্রিধারীদের জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন UNHCR, UNDP, WHO, Save the Children, IOM, ILO ইত্যাদিতে আছে আইন সংশ্লিষ্ট নানান কাজের সুযোগ। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসগুলোতেও আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের সুযোগ আইনের ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত আছে।

আইনজীবী- আইন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি অথচ আইনজীবী হওয়ার কথা সবার শেষে বলছি। যারা ভাবেন আইন পড়লে শুধু আইনজীবী হওযায় তাদের দেখাতে চেয়েছি আইনজীবী না হলেও কত অপশন আছে।

বেশিরভাগ আইনের ডিগ্রিধারীর প্রথম স্বপ্নই থাকে একজন আইনজীবী হবে। কিন্তু আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ায় অনেক চ্যালেঞ্জ থাকায় এবং চোখের সামনে এতো এতো নগদ অপশন থাকায় বেশিরভাগ আইনের শিক্ষার্থীই কিন্তু প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার হয়না।

আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ৷

সামসুল আলম সাদ্দামঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

 
Electronic Paper