ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে না পারলে আমরা সফল বলতে পারবো না’

মাহমুদুল হাসান
🕐 ৫:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২৪

‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে না পারলে আমরা সফল বলতে পারবো না’

সরকারের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে অতি দ্রুত মাঠে নামবে ছাত্রদল। এ জন্য ঢাকা শহরসহ সারা দেশে সাংঠনিক তৎপরতা শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। বিগত দিনের ব্যর্থতা ভুলে শেখ হাসিনা সরকারকে ‘বিদায়’ করাই সফলতা মনে করেছেন সংগঠনের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা।

সম্প্রতি খোলা কাগজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। নিকট অতীতে ছাত্রদলের আন্দোলনে ব্যর্থতা ও সফলতার প্রসঙ্গে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে রয়েছি। কিন্তু এ সংগ্রাম স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে হচ্ছে না। একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি।’

১৯৯০ সালের ছাত্র আন্দোলন এবং বর্তমানে ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৯০ সাল কিংবা স্বাধীনতার সময় যে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে সেই সময় কিন্তু প্রকাশ্যে গুলি করে মারা হতো না। দুই একটি ঘটনা ঘটেছে। সেটা কিন্তু এখন ঐতিহাসিকভাবে পালিত হচ্ছে। গত ১৫ বছর ছাত্রদল যেভাবে আন্দোলন করছে, আপনারা দেখেছেন। শেখ হাসিনা সরকার আমাদের হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছে, গুম করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে, জেলে পাঠিয়েছে। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি সবচেয়ে ক্রান্তিলগ্ন এবং চ্যালেঞ্জিং সময়ে রয়েছে। সুতরাং আমরা সফল হয়েছি, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ শেখ হাসিনাকে যতদিন ক্ষমতা থেকে টেনে হেঁচড়ে নামাতে না পারব; আমরা সফলতা বলতে পারবো না।’

ছাত্রদল কী ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়- এমন প্রশ্নের জবাবে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে ছাত্রদল। ৫০ বছরের ছাত্র রাজনীতিতে বিপজ্জনক সময়ে কাজ করছি আমরা। এই খারাপ সময়ে ছাত্রদল যে কাজ করছে আমি খুব সাধুবাদ জানাই।’

ঐক্যবদ্ধভাবে ছাত্রদল কেন মাঠে নামতে পারছেন না বা পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে নাছির বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে না নামার অনেক কারণ রয়েছে। যে আন্দোলনে আমরা রয়েছি, সে আন্দোলনের ধারাকে প্রলম্বিত করা হচ্ছে, বাধা দিচ্ছে। তারা (সরকার) কিন্তু ফ্যাসিস্ট ভূমিকায় রয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে মাঠে নামতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে- সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণ। সরকারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দেখা মাত্রই আমাদের নেতকর্মীকে গুলি করছে। তা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছি।’

সরকারের এমন নীতি তাহলে কীভাবে মোকাবিলা করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অতীতে হয়তো আমাদের পরিকল্পনায় ভুল ছিল। সেগুলো আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য।’

কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছাত্রদলের সমন্বয়হীনতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এমন অবস্থা থেকে এবার কীভাবে বের হবেন? জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিকট অতীতে হয়তো আমরা সফল হয়নি বলে এ প্রশ্ন। আমরা সাংগঠনিক পরিকল্পনা নিয়েছি। সাংগঠনিক কাজে মনোনিবেশ করছি। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক তৎপরতা বাড়ানো হবে।’
মাঠের আন্দোলনে কবে ফিরছে ছাত্রদল- এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আন্দোলনে অতি দ্রুতই আমরা মাঠে নামব। ঢাকা শহরে যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের ইউনিট রয়েছে সেখানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেখানে সাংঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। কিছু দিনের মধ্যে তা দৃশ্যমান হবে।’

গত ১ মার্চ ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে, কমিটি কতদিনে পূর্ণাঙ্গ হবে- জানাতে চাইলে নাছির বলেন, ‘দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নিদের্শনা রয়েছে। শহিদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল নিবেদনের পরই কমিটি কাজে মনোনিবেশ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ১১৮টি জেলা কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জেলার সাংগঠনিক কমিটিগুলো করবো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে।’

ছাত্রদল ব্যর্থতার ইতিহাস ভুলে কীভাবে নতুন ইতিহাস গড়বেন- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল কখনো ব্যর্থ হয়নি। ’৯০ সালে ব্যর্থ হয়নি। ২০০৬ সালের পরও যে আন্দোলন হয়েছে, ছাত্রদল ব্যর্থ হয়নি। পরবর্তীতে যে সব আন্দোলন হয়েছে, কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচারকে দুই/চার/দশ দিন, এক/দুই বছরে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনেহেঁচড়ে নামানো যায়নি। আমাদের এ আন্দোলন আর বেশি দিন প্রলম্বিত হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাবো- আসুন, দেশ মাতৃকার কল্যাণে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, মানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে, আমাদের সঙ্গে শরিক হোন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করি। এই আন্দোলন দেশের মানুষের জন্য, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য। এ আন্দোলনে শরিক হোন, বিজয় অবধারিত। এই সরকারকে অবশ্যই চলে যেতে হবে।’

 
Electronic Paper