চীন পারলেও অন্যরা পারছে না কেন?
আরিফুল ইসলাম
🕐 ১০:১২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২১

উৎসস্থল চীনে করোনা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বিশ্বের অনেক বড় বড় রাষ্ট্র করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। চীন পারলেও অন্যরা কেন পারছেন না- এ বিষয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ভাইরাসবিদ অধ্যাপক ড. মোশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘চীন তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে পেরেছে। উহানে যখন শুরু হলো এবং সংক্রমণের হার শূন্যের কোটায় আসার পর আরো ৪ সপ্তাহ সবাই ঘরে ছিল। গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। সবার থাকা এবং খাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল। এমনকি যারা বিদেশি ছিলেন, তাদেরও তারা নিয়মিত খাবার সরবরাহ করেছে।’ থাকা এবং খাওয়ার সমাধান হলে অনেকখানি সমাধান ঘটতে পারে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘সামাজিক-অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা এবং খাবারের গ্যারান্টির কারণে সংক্রমণ ৮-১০ সপ্তাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখতে পেরেছে।’
চীনে এখনো অল্প অল্প সংক্রমণ হচ্ছে। ড. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘নতুন করে কোথাও যদি করোনা পাওয়া যায়, তাহলে তারা পুরো এলাকা কনটেইন করে ওই এলাকার সকলের পরীক্ষা করা হয়। ওই সময় সবাই ঘরে থাকে। টেস্ট করে কারা কারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নিয়ে যায়, বাকিরা বাসায় কোয়ারেন্টাইন করে। ওই সময়ে খাবার-দাবারের সমস্যা হয় না। যখন শূন্যের কোটায় চলে আসে, তারপর তিন-চার সপ্তাহ অপেক্ষা করে। তারপর ঘর থেকে বের হয়।’
বাংলাদেশ কেন পারছে না এর জন্য মোটা দাগে দুটি কারণ উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘সবাইকে আমরা ঘরে রাখলাম, যাতায়াত বন্ধ রাখলাম, যেটা আমরা পারি না- খাবার জোগান দিতে। আর যেটা পারি না সবার টেস্ট করানো। এখন হয়তো পারব। তারা অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে নির্ণয় করত, এখন আমরাও সেটা করছি। অ্যান্টিজেন টেস্ট আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে, নওগাঁয় করা হচ্ছে। অ্যান্টিজেন টেস্টে আমাদের সক্ষমতা চীনের মতো না হলেও কাছাকাছি।’
তিনি বলেন, ‘চীন সমাজতান্ত্রিক দেশ, ভিয়েতনামও এটা করে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডও কিন্তু এটা করে নাগরিকদের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা, ভুটান এবং থাইল্যান্ড তারা কিন্তু রাজতান্ত্রিক দেশ, তারাও এটা করতে পারে। কাজেই এখানে সিস্টেমটা তিন ধরনের। সমাজতান্ত্রিক, একটা উন্নত পুঁজিবাদী আরেকটা রাজতান্ত্রিক।’
‘যারা তাদের নাগরিকদের চিকিৎসা, বাসস্থান এবং খাওয়াÑ এই তিনটির নিশ্চয়তা দিতে পারছে তারা কিন্তু দীর্ঘদিন মানুষকে ঘরে রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এই যে ইংল্যান্ড; তারা কিন্তু চীনের মতো পারেনি। তবুও যারা বেকার ছিল তাদের সাপ্তাহিক ন্যূনতম খরচটা ব্যাংকে দিয়ে দিয়েছে।’
শুরুতে আমেরিকা একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসার পরে কিছুটা নাগরিকদের সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারপরও যার যার তার তার। যে কারণে সেখানে সংক্রমণটাও এত বেশি।’
‘বাংলাদেশে আমরা যদি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারতাম আমরা সফল হতে পারতাম। আমাদের টেকনিক জানা আছে। কীভাবে কোয়ারেন্টাইন করতে হয়, কীভাবে আইসোলেশন করতে হয়, আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী যারা আছেন, তারা সবাই সহজে বিষয়গুলো ধরে ফেলছেন। মানুষকে ঘরে রেখে খাবারের জোগান দিতে পারলে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতাম।’
সারা বিশ্বে অন্তত ১৮ কোটি লোক আক্রান্ত ও ১৭ লক্ষাধিক মারা গেলেও চীনে মাত্র ৯১ হাজারের মতো আক্রান্ত ও সাড়ে চার সহস্রাধিক মারা গেছে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
