ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্য গোপন করে ইনক্রিমেন্ট নেওয়ার অভিযোগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে

হাছিবুল ইসলাম সবুজ, কুবি
🕐 ৮:৫৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২৪

তথ্য গোপন করে ইনক্রিমেন্ট নেওয়ার অভিযোগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে

বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস স্মারক অনুযায়ী, ‘অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অন্যান্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের অব্যহতির পূর্বে আহরিত শেষ বেতন চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অথবা উভয় পক্ষের সম্মতিতে সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত বেতনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকালীন চাকরির জন্য কোনো বর্ধিত পেনশন বা ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য হবেন না।’

তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন ২০১১ সালে চাকরি ছাড়লেও উপাচার্যের নিয়োগ প্রজ্ঞাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ্য করায় দুইবার ইনক্রিমেন্ট দিয়েছে কুবি অর্থ দপ্তর। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা কোষাধ্যক্ষকে জেরা করলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্য গোপন করে তিনি উপাচার্য হয়েছেন এবং অনৈতিকভাবে ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাচার্য মঈন ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দেন। তখন তিনি গ্রেড-৩ এর অধ্যাপক। চাকরি ছেড়ে ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতে শিক্ষকতা করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক হিসেবে ফের নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি হলে ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐ চুক্তি থেকে রিলিজ দেওয়া হয়।

জাতীয় বেতন স্ক্রেল ২০১৫ অনুযায়ী, তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে ৬৮৭৭০ টাকা বেতন পেয়ে আসছিলেন। পরে দুইবার ইনক্রিমেন্ট নিয়ে বর্তমানে ৭৪৪০০ টাকা নিচ্ছেন তিনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক থাকাকালীন আরও কম বেতন পেতেন বলে জানা গেছে।

উপাচার্যের বেতন কেমন হবে বিষয়টি মতবিরোধ আছে দাবি করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, কুবিতে যোগদানের পর থেকেই ওনি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী ওনি ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন না। কাজেই এটা একটা অর্থনৈতিক কেলাঙ্কারি, অনিয়ম এবং বেআইনি কাজ। ভিসি হওয়ার সময় উনি তথ্য গোপন করেছেন। কারণ যারা রিটার্য়াড বা চুক্তিভিত্তিক যারা তাদের প্রজ্ঞাপন আলাদা হয়। ঢাবিতে চুক্তিভিত্তিক যে বেতন ছিল সেটা হবে নাকি ওনি যখন অবসর গ্রহণ করেছিলেন সেটা হবে, এটা নিয়েও মতবিরোধ আছে। এরকম ভুল তথ্য দিয়ে উপাচার্য পদে চাকরি করার যোগ্যতা কতটুকু?

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, যে ব্যক্তি ওনার স্যালারি শিটে চুরি করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য যে-সব খাত আছে; গবেষণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষদে ভুয়া বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। সেজন্য ওনার বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ওনার আগাগোড়া পুরোটাই প্রতারণা করেই তথ্য গোপন করে উপাচার্য হয়েছেন।

অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের যেভাবে কাগজ দেওয়া হয়েছে আমরা সেভাবেই বেতন নির্ধারণ করেছি। উনার নিয়োগের কোথায় লিখা নেই ওনি চুক্তিভিত্তিক। তবে উনার যে ইনক্রিমেন্ট হওয়ার কথা না, সেটি আমিও শুনেছি। তথ্য গোপন করছে কি না সে বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আর তথ্য গোপনের বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করে বিব্রত করিয়েন না।

কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২৭০ জনের মত শিক্ষক আছে। কার কখন ইনক্রিমেন্ট হয় এটা কি ট্রেজারার বসে বসে গুনবে? হয়ত অর্থ দপ্তরে যিনি (তাহের) বেতন দেখেন, তিনি ভুল করছেন। এখানে অর্থ দপ্তরের কাছে যে ইনফরমেশন এসেছে সে আলোকে কাজ করেছে।

অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর মো. আবু তাহের বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নিয়োগপত্রে কোথাও কোন চুক্তিভিত্তিক লেখা নেই। আমরা তো ধরেই নিয়েছি ওনি নিয়মিত শিক্ষক। সে হিসেবে আমরা ইনক্রিমেন্ট দিয়েছি। এখানে আমাদের কোন ভুল নেই, কারণ যাচাই বাছাই তো করবে শিক্ষামন্ত্রণালয়। আমরা শুধু অর্ডার ক্যারি করি।

তবে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন কথা বলতে অপরাগ প্রকাশ করে বলেন, ইনক্রিমেন্ট যদি নিয়ে থাকি তাহলে ফেরত দিব।

 
Electronic Paper