ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সময়ের ব্যবধানে শাস্তির ধারণা বদলায়

মোকাররম হোসেন
🕐 ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০১৯

আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের মধ্যে অপরাধের বিচার ও শাস্তির ধারণা নিয়ে যখন আলাপ হয়, মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করা হয়, অনেকেই তখন নাখোশ হন। আহত বোধ করেন। যদি তারা ইসলামী রাষ্ট্র বলে কিছু প্রতিষ্ঠা কখনো করতে সফল হন ওইখানে কীভাবে শরিয়া আইন কায়েম করবেন সেই আলাপ তারা করতেই পারেন। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রের আলাপে (হুদুদের সঙ্গে মিল আছে এমন) আইনের বিরোধিতাকে ইসলাম বিরোধিতা মনে করার কোনো কারণ নেই। সমস্যা হলো, ইসলামপন্থিরা মনে করেন ইসলামে যেহেতু এসব শাস্তির বিধান আছে, তাই এসব শাস্তির বিরোধিতা করার অর্থ হলো ইসলাম বিরোধিতা।

একথা সত্য যে, কেউ কেউ ইসলাম বিরোধিতার জায়গা থেকেই শরিয়া আইনকে বর্বর বলেন। তারা শরিয়া আইনকে বর্বর ট্যাগ দিয়ে পক্ষান্তরে ইসলামকেই বর্বর আখ্যা দেন। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষীদের তৎপরতা আমলে না নিয়েও বর্বরতার ধারণা নিয়ে অন্য আলাপ থাকতে পারে। বর্বরতার ধারণা সভ্যতা ও চিন্তার অগ্রগতির প্রেক্ষিতে বদলায়। ইসলাম বিকাশের কালে যেসব শাস্তির বিধান এসেছে তা অন্য সভ্যতার তুলনায় অনেক বেশি মানবিক ছিল। ইসলাম দুনিয়াতে বিকাশ হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল বিজিত অঞ্চলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলাম যে সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল সেখানে মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠিন শাস্তির প্রয়োগ খুব কমই করতে হয়েছিল।

সেই কালে কোনো দার্শনিক, চিন্তক, আইনজ্ঞ ইসলামের শাস্তির বিধানগুলোকে বর্বর আখ্যায়িত করেছেন এমন নজির নেই। কিন্তু এই যুগে দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ বেত্রাঘাত, অঙ্গচ্ছেদ, ফাঁসি, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যু ইত্যাদি শাস্তির ধারণাকে বর্বর মনে করেন। দুনিয়ার ১৩০টা দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ হয়েছে। কারণ অপরাধপ্রবণতা, বিচার, শাস্তি ও তার প্রতিবিধান নিয়ে নতুন নতুন ধারণা হাজির করছেন এই যুগের চিন্তকরা। এক কালে যে শাস্তি বর্বর বিবেচিত হয়নি বরং ন্যয়বিচারের প্রতীক ছিল, সেই শাস্তি অন্য সময়ে এসে বর্বর মনে হতেই পারে। দুনিয়া নিয়ত পরিবর্তনশীল। মানুষের চিন্তাও নিয়ত বিবর্তন হতে থাকে।

দুইটা উদাহরণ দিয়ে আমরা এই সমস্যা বোঝার চেষ্টা করব। প্রথমত, দাসদের সঙ্গে ভালো আচরণের শিক্ষা এবং দাস মুক্তির উৎসাহ দেওয়া সত্ত্বেও ইসলামে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়নি। কারণ ওই যুগে অতটুকুই যথেষ্ট ছিল। মানুষকে দাস হিসেবে হাটবাজারে বিক্রি ওই সময় বিরাট কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু এই কালে মানুষকে হাটবাজারে বিক্রি আমরা কল্পনাই করতে পারবেন না। আর দাসিদের সঙ্গে যৌনতা তো কল্পনাতীত। মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের ধারণা এগিয়েছে অনেক দূর। এইকালে দাসপ্রথা একটা বর্বর ব্যবস্থা হিসেবেই বিবেচিত।

দ্বিতীয়ত, ইসলামে মেয়েদের বাল্যবিয়ে বৈধ হওয়া সত্ত্বেও আপনি নিশ্চয় আপনার দশ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেবেন না। এই কালে এমন বিবাহ আপনি বর্বরতা বলেই বিবেচনা করেন। বর্বরতার ধারণা কালে কালে বদলায়।

আদতে ইসলাম বা শরিয়া কোনোটাই বর্বর না। বরং দুনিয়ার প্যারাডাইম শিপ্ট ধরতে না পারা এবং একটা নির্দিষ্ট স্থান, কালের কনটেক্সটে প্রদত্ত সমাধানকে আবাদান আবাদ প্রয়োগ করতে চাওয়ার যে মনোকাঠামো সেটাই বর্বরতা। মনে রাখতে হবে ইসলামের এসেন্স স্থান, কালের সীমা অতিক্রম করে। কিন্তু বিধান স্থান, কালের কনটেক্সটে সীমিত। ইসলামের এসেন্স ধারণ করে নতুন সময়ে নতুন সমাধান হাজির করার সক্ষমতার মধ্যেই ইসলামের অনন্যতা।

মোকাররম হোসেন
লেখক

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper