ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জরুরি

সম্পাদকীয়
🕐 ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২১

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জরুরি

রংপুরের পীরগঞ্জে রামনাথপুর ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত জেলে পল্লী মাঝিপাড়ায় ঘটে গেছে তুলকালাম কা-। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে হাজার হাজার মানুষ চতুর্দিক থেকে ওই পাড়া ঘেরাও করে ১৮টি ঘর ও দুটি মন্দির আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। ৪৮টি বাড়িতে ভাংচুর করেছে। ৬৬টি পরিবারের গবাদি পশু, স্বর্ণালংকার, রেডিও, টিভি ও ঘরের জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দেখতে পাই, কোনো একটা অভিযোগ বা অজুহাত খাড়া করে এলাকা-বিশেষে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা যেন আমাদের সমাজে অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে পূজাম-প ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হয়। সেই ঘটনার রেশ ধরেই হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গত কয়েক দিন ধরে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। চলমান এই পরিস্থিতির মধ্যে পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ৯ বছরে সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ৩ হাজার ৬৫৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরাই।

সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতি যে ভয়ঙ্কর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের সুশীল সমাজ ও বিশিষ্টজনরা বিষয়টিকে উদ্বেগের চোখে দেখছেন। ধর্মভিত্তিক ও রাজনৈতিক ইস্যু, দখলদারিত্বসহ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় দেশে ছোট ছোট সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। যারা এসব ঘটনা ঘটায় তাদের কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির না থাকায় দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। দেশের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা হিসেবে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব হামলার উদ্দেশ্য হলো জায়গা-জমি-বাস্তুভিটা ও সম্পদ-সম্বল দখল করে নেওয়া। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের যেসব ঘটনা তাতে প্রশাসনের ভূমিকাও প্রায় একই ধরনের বলা যায়। ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে বক্তব্য বা ছবি ব্যবহার করে উস্কানি সৃষ্টি করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসন বিভ্রান্ত হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধী পার পেয়ে যায়।

এ ধরণের ঘটনায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা যাতে ছড়িয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিচার মেলে না অনেক ক্ষেত্রেই। ফেসবুক জালিয়াতির মাধ্যমে নিরীহ ব্যক্তি হামলা বা নির্যাতনের শিকার হতে পারে- এ ধরণের সমস্যার বিশ্লেষণ করতে প্রশাসনকে বড় একটা দেখা যায় না। সম্প্রতিক ঘটনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসন ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জের ঘটনার রাতেই পুুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে। রংপুর জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন। র‌্যাব, বিজিপি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পীরগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনার ব্যাপক ও গভীর অনুসন্ধানমূলক তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে সঠিক তথ্য তথা সত্য বেরিয়ে আসে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সচেতন হতে হবে। ধর্মীয় উত্তেজনার প্রভাবে অন্ধ হলে চলবে না। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper