বন্ধ হোক বিটকয়েন বাণিজ্য
সম্পাদকীয় ১২:৫৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২১

পণ্য বিনিময় প্রথা পেরিয়ে এসেছে মুদ্রা প্রথা। মুদ্রার ব্যবহারে ফিরেছে স্বস্তি। তবে মাঝে মধ্যে এর অপব্যবহারও চোখে পড়ে। মুদ্রাকেন্দ্রিক অপরাধও বেড়েছে। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভার্চুয়াল মুদ্রা আর বিটকয়েন যা-ই বলা হোক না কেন, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা। কারণ এর দাম শেয়ার বাজারের মতো ওঠা-নামা করে। ফলে অধিক লাভের আশায় এটি কিনে থাকেন। এরপর মূল্য পরিশোধ করেন ব্যাংকের হিসাব, বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। যদিও পৃথিবীর কোনো দেশের স্বীকৃত বা বৈধ মুদ্রা নয় এই বিটকয়েন। বাংলাদেশেও এই মুদ্রা অবৈধ। কিন্তু তারপরও হচ্ছে লেনদেন। একটি চক্র তলে তলে প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে এ নিষিদ্ধ কয়েন বা মুদ্রা।
দেশে বিটকয়েনে লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত এ ধরনের কয়েকটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বুধবার সকালে গাজীপুর থেকে বিটকয়েনের প্রতারণা চক্রের মূলহোতা রায়হান হোসেনকে আটক করেছে র্যাব। অভিযানে তার কাছ থেকে ১৯টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ১৮টি সিম কার্ড, ২৭১টি বিটকয়েন অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। আটক আসামির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গত এক মাসে ৩৫ হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি বলেন, বুধবার সকালে ঢাকার গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে এ প্রতারককে আটক করা হয়। অভিযানে তার কাছ থেকে ১৯টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ১৮টি সিম কার্ড, ২৭১টি বিটকয়েন অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এ ধরনের লেনদেন চলছে। বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র অর্থ লেনদেন করছে দেশে কার্যরত বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে বিটকয়েন লেনদেন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তারপরও এই ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেন চলছে, আর এতে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা করছেন বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিবিদরা। তারা বলছেন, সাবধান, লেনদেনে সতর্ক হতে হবে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বিটকয়েন লেনদেন নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বলছে, এ ধরনের মুদ্রায় লেনদেন ঝুঁঁকিপূর্ণ। এটি পুরোপুরি অবৈধ।
দেশে অবৈধ হলেও বিটকয়েনের লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত একজন বলেন, বিটকয়েন ডলার কিংবা টাকায় রূপান্তর করা হচ্ছে। অনলাইনে যোগাযোগ করে যে কেউ তাদের কাছ থেকে বিটকয়েন বিনিময় করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে কমিশন নেন তারা। আর বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া বিটকয়েন পরবর্তীকালে অনলাইনেই বিদেশি মার্কেট প্লেসগুলোয় বিক্রি করা হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিটকয়েন মূলত ইন্টারনেট সিস্টেমে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কে প্রোগ্রামিং করা আছে, যা চাইলে কেনা যায়। তবে এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা কোনো দেশের জারি করা মুদ্রা নয়। বিটকয়েন বাণিজ্য বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টরা জোরালো পদক্ষেপ নেবেন বলেই প্রত্যাশা।