ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দ্রুত এগুচ্ছে পূর্বাচলের ৩শ ফুট সড়কের নির্মাণ কাজ

৭ মিনিটে বাধাহীন ১২ কিলোমিটার পরিবহন যাত্রা

মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ
🕐 ৪:৫৫ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২২

৭ মিনিটে বাধাহীন ১২ কিলোমিটার পরিবহন যাত্রা

মাত্র ৭ মিনিটেই পৌঁছা যাচ্ছে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের শেষস্থল কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। তবে এখনো দেশের এ দৃষ্টিননন্দন এ সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান। এটি ৩শ ফুট চওড়া হওয়ার এর নাম দেয়া হয়েছে ৩শ ফুট সড়ক।

যা হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের অন্যতম। পশ্চিমের প্রগতি সরণি ও বিমান বন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বে ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্তকারী এই সড়ককে বলা হচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন স্থাপনাও। কাজ শেষে গতিসীমা সুবিধাই নয়, পরিবেশবান্ধব যানজটহীন একটি উন্নত সড়ক পাবে দেশের জনগণ।

সূত্র জানায়,২০২২এর জানুয়ারীতে সবশেষ কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণ করা ১০টি বড় সেতুর কারনে কিছুটা দেরী হয়। যার রয়েছে হাতিরঝিলের আদলে ১৩টি আর্চ ব্রিজ। বৃষ্টির পানি নিস্কাশনে ৪ কিলোমিটার নালা, দু’টি কালভার্ট, ১২টি ওয়াটার বাসস্ট্যান্ড ও ৪টি পাতাল পথ। শুধু তাই নয়, দুই পাশের খালে চলবে ওয়াটার বাস। যা মূলত পর্যটকদের জন্যই চালু করা হবে। খালের দুই পাশে তৈরি করা হবে সবুজ ওয়াকওয়ে। আর এখানেই এক সঙ্গে ৪০ হাজারের বেশি পর্যটক প্রকল্পের সৌন্দর্য দেখতে পারবেন একসঙ্গে।

প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন বলেন, এটা হবে হাতিরঝিলের চেয়েও আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন। বর্তমানে কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যে কয়েকটি সেতু রয়েছে, প্রত্যেকটির পাশেই নতুন সম্প্রসারিত সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তার প্রশস্ততা ঠিক রাখতে।

সূত্র আরো জানায়, ৩শ ফুট চওড়ায় ৮ লেন সড়কের এই দৃষ্টিনন্দন রাস্তাটির দুই পাশেই থাকবে পরিবেশ ও পর্যটন বান্ধব নানা স্থাপনা। তাই মেগা প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে, ১৪ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এটা বাস্তবায়নে সাড়ে ৪ হাজার কর্মীর দিন রাতের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে প্রতিদিন। সেনাবাহীনি পরিচালিত বিশ্বাস বিল্ডার্সের বাস্তবায়নে এ আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে থাকছে ৬ লেনের সার্ভিসওয়ে এবং দুই পাশে ১০০ ফুটের পাড় বাঁধানো খাল। অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোনো ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের যানবাহন চলবে আপন গতিতে। ফলে এর নির্মাণকাজ শেষ হলে একটি গাড়ি ৬ থেকে ৭ মিনিটে বাধাহীনভাবে পার হবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় পুরো সড়কে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রি যত্রতত্র ফেলে রাখায় যানবাহনের চাকা পাঞ্চারসহ নানা ধরনের দূর্ঘটনার শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে গত জানুয়ারীতে পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে প্রথমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়। এ পর্যন্ত মুল লেনের অভ্যন্তরীন সড়কের কার্পেটিং কাজ শেষ পর্যায়ে।

এদিকে আর রাস্তায় নির্মাণ কাজ করতে দেখা গেছে, ভারী সব যন্ত্রপাতি বড়বড় ক্রেন, লিফটার, ট্রাক ড্রেজার ব্যবহার করে। যার মাধ্যমে ব্রিজ-কালভার্ট, আন্ডারপাস, ওভারপাসে এই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করা হচ্ছে। এ সড়কের নির্মাণ কাজে কর্মরত বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রকৌশলী হামিদুল ইসলাম বলেন, করোনার মহামারি কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কাজ কিছুটা থমকে গেলেও এখন কাজ চলছে পুরোদমে। দিনরাত নির্মাণ শ্রমিকরা এই এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় পূর্বাচলের পিতলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা দেখতে পারছি। স্থানে স্থানে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসবের মাঝে দেশের উন্নয়নের চিত্রের অন্যতম হলো পূর্বাচল স্যাটেলাইট শহর আর এর প্রবেশ পথ ৩শ ফুট সড়ক। যা ইতোপূর্বে দেশের কোথাও তৈরী হয়নি। এমনকি এশিয়া মহাদেশে এমন সড়ক বিরল।

পূর্বাচলের ৪নং সেক্টর ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য রিটন প্রধান বলেন, পূর্বাচলের ৩শ ফুট সড়ক একদিকে যেমন এশিয়া মহাদেশের অন্যতম সড়ক। অন্যদিকে দেশের অন্যতম পর্যটনীয় স্পটে রূপ নিচ্ছে। কারন, এ সড়কে যানজটের কোন সম্ভাবনা নেই। আবার সিগনালও নেই। ফলে স্বস্থির যাতায়াতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও এর দক্ষ শ্রমিকরা এই এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছেন। পুরো রাস্তায় চলছে কাজ। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কাজ শেষ করব। এখন প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ। তবে ব্রিজ কালভার্ট ও নকশা বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগতে পারে।

 
Electronic Paper