ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চিরকুট অব ডিসকর্ড

শিমুল শাহিন
🕐 ৪:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২০

চিরকুট অব ডিসকর্ড

ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছিল। কয়েকজন বন্ধু মিলে বেশ সাজানো একটা ফাস্টফুড শপে ঢুকলাম। এসবে এসে এই এক জ¦ালাÑ খাবার অর্ডার করে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এক ওয়েটারকে হাত ইশারায় ডেকে খাবার আনতে বললাম দ্রুত। আমাদের টেবিলের পাশের সারির একটা টেবিলে পাঁচজন মেয়ের একটা দল বসেছে। আড়চোখে দেখলাম বেশ সুন্দরী সব কটা মেয়েই। যতক্ষণ থেকে এখানে এসে বসেছি ততক্ষণ থেকেই দেখছি ওরা উচ্চস্বরে কথা বলছে আর হেসে চলেছে। ঠুনকো কথায় হেসে একজন অন্যজনের গায়ে গড়িয়ে পড়ছে। অন্য টেবিলগুলোয় বসা সবার মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে প্রায় সকলেই তাদের এমন আচরণে বিরক্ত। আমরা পরশ্রীকাতর নই, কিন্তু এমনিতেই পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে, তার ওপর মেয়েগুলোর অকারণে এমন উচ্ছ্বাস আর উচ্চস্বরে কথাবার্তা আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে দিচ্ছে। একটা ওয়েটারকে ডেকে বললাম তাদের চেঁচামেচিটা একটু নিয়ন্ত্রণে আনতে। ওয়েটার তাদের বলে এলো, কিন্তু তারপরেও তাদের কোনো ধরনের পরিবর্তন দেখা গেল না। তাদের এমন আচরণ দেখে বন্ধু জীবন বলল, ‘বদমাশ একেকটা, ওরা ইচ্ছে করেই সবাইকে বিরক্ত করার চেষ্টা করছে! ওরা থামবে না!’

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘থামবে, থামবে!’
এমন কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকাল। রহমত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘কীভাবে?’
তার কথায় উত্তর না দিয়ে একটু হাসলাম। তারপর হাত ইশারায় ওয়েটারকে ডাকলাম। ওয়েটার এগিয়ে আসতেই মুন্নাকে বললাম, ‘একশ’টা টাকা বের করতো!’
জাত হাড়কিপ্টে মুন্না আমতা আমতা করে বলল, ‘কেন? কী করবি?’
একটু জোর দিয়ে বললাম, ‘আরে দে না, অপেক্ষা কর বুঝতে পারবি!’
সে মনের বিরুদ্ধে অনেকটা জোর করে মানিব্যাগ থেকে একশ’ টাকার একটা কচকচে নোট বের করে দিল। টাকাটা ওয়েটারের হাতে দিলাম। ঘাড়ের ব্যাগ থেকে একটা কলম আর একটা সাদা পাতা বের করে তাতে খসখস করে দুটো কথা লিখলাম। চিরকুটটা ওয়েটারের হাতে দিয়ে বললাম, ‘তোমাদের রেস্টুরেন্টের সামনের ফুলের দোকানটা থেকে একটা গোলাপ কিনে এই চিরকুটটাসহ ওই মেয়েদের টেবিলটায় দিয়ে আসবে! আর বাকি টাকাটা তুমি রেখে দিও!’
ওয়েটারটা মৃদু হেসে ‘জি স্যার’ বলে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম মেয়েদের অর্ডার করা খাবার নিয়ে সেই ওয়েটারটা আসছে। খাবারের ট্রেতে একটা গোলাপ ফুল আর আমার লিখে দেওয়া বার্তাসহ চিরকুটটাও ভাঁজ করে রাখা। ওয়েটার টেবিলে খাবার রাখতেই তাদের নজরে পড়ল গোলাপ ফুল আর চিরকুটটায়। ওদের একজন গোলাপ ফুলটা হাতে তুলে নিল, আর একজন তুলল চিরকুটটা। চিরকুটটা হাতে নিয়ে মেয়েটা সবাইকে পড়ে শোনাল। চিরকুটটা পড়া শেষে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাতে শুরু করল। একজন বলল, ‘দে, ফুলটা আমাকেই দিছে!’
ফুল হাতে নেওয়া মেয়েটা ফুলটা সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘আয়নায় নিজের চেহারাটা কখনো দেখেছিস?’
মেয়েদের দলটায় অদ্ভুতভাবে নীরবতা নেমে এসেছে। তাদের সবাই যে কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে আছে তা দূর থেকেও আমরা বুঝতে পারছি। এতক্ষণ একজনের গায়ে অন্যজন ঢলে পড়া মেয়েদের দলটা দেখে মনে হচ্ছে তারা কেউ কাউকে চেনে না। মনে হচ্ছে একজনকে দেখে অন্যজন নাক সিঁটকাচ্ছে।
ওদের এমন নীরবতা দেখে জীবন অবাক হয়ে বলল, ‘কী রে, চিরকুটে কী লিখেছিলি যে ওরা এমন ঠা-া হয়ে গেল?’
ওর কথা শুনে হাসলাম। বললাম, ‘গ্রিক পুরাণে ‘অ্যাপল অব ডিসকর্ড’ নামে একটা কথা আছে জানিস?’
সে বলল, ‘তা তো জানি!’
‘কী সেটা বল তো?’
‘ওই যে জিউসের ভোজসভায় ঝগড়ার দেবতা একটা আপেল ছুড়ে দিয়েছিল। সেটায় লেখা ছিল এই আপেল স্বর্গ-মর্ত্যরে সবচেয়ে সুন্দরী রমণীর জন্য। আর এটার জন্য হেরা, এথেনা, আফ্রোদিতিদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। তাদের সবাই নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী ভাবত!’
ওকে থামিয়ে বললাম, ‘হুম, আজ আমি সেরকমভাবেই ঝগড়ার দেবতার রোল প্লে করেছি মাত্র!’
সবাই কিঞ্চিৎ রেগে আমার দিকে তাকাল। রহমত বলল, ‘আরে লিখেছিলি কী সেটা আগে বল, ঝেড়ে কাশ তো।’
হাসতে হাসতে বললাম, ‘আমাদের রেস্টুরেন্টের তরফ থেকে গোলাপটা এই টেবিলের সবচেয়ে সুন্দরী রমণীর জন্য!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper