ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খাবারের (বি) স্বাদ

শফিক নহোর
🕐 ৩:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২০

গদা শামসু গ্রামের মানুষ। সহজ-সরল হওয়ার কথা থাকলেও তেমন নয়। সে কৈ মাছের তেল দিয়ে কৈ ভাজা মানুষ। অনেক সময় তাকে দেখে মনে হবে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারে না।

সংসারে, বউ, ছেলেপেলে একগাদা থাকলেও সে কোনো কাজকর্ম করে না। সংসার ঠিকঠাকভাবে চলছে। অনেকটা পরের ধনে পোদ্দারি।

মধু খাঁ শহরে থাকে। গ্রামের জমিজমা গদা শামসু দেখভাল করে। মানুষ একবার শহরমুখী হয়ে টাকার মুখ দেখলে তার আর গ্রামের প্রতি মায়া তেমন একটা থাকে না। করোনাকাল এখনো কাটেনি তবে একশ্রেণির দরবেশ ডাক্তার জাতীয় লোকজন ভাবছে করোনা চলে গেছে। শুরু হয়ে গেছে বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন পার্টি।

বিশেষজ্ঞ বলছেন, সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে। তবুও আমরা যা বুঝি তা অন্য কেউ বুঝতে চায় না। এখানেও গদা শামসু বাজিমাত করেছেন। লকডাউনে থাকার ফলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে চেয়ে সহযোগিতা নিয়েছেন। আর নিজের অভাব ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পীর তুলির নিপুণ কারুকাজে।

মধু খাঁ তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে বড় করে। লোকজন দাওয়াত দেওয়া প্রায় শেষ। তার কিছু দায়িত্ব পড়েছিল গদা শামসুর কাঁধে। নয় ছয় করে পকেটে টাকা চলে এলে সে মহাখুশি।

গদা শামসু বলতে গেলে জাতে পাগল তালে ঠিক। বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন তাকে বরযাত্রীর সঙ্গে খেতে না দেওয়ায় হালকা অভিমান করেছে; এবং বলে বসল রান্না স্বাদ হয়নি।

তখন ঘটে গেল নতুন এক কাণ্ড জাত গেল জাত গেল বলে...!

গদা শামসু বলে উঠল, আমি আগেই খেয়ে ফেলেছি, স্বাদ। এ কথা বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ল। মুখে মুখে রটে গেল বিয়েবাড়ির রান্না স্বাদ হয়নি। বরযাত্রী হিসেবে যারা এসেছিল খাবার পরে তারা সবাই একই কথা বলে উঠল, খাবার স্বাদ হয়নি।

মধু সাহেবের চোখ কপালে উঠে গেল। মেয়ের বিয়ে বলে কথা। অনেক টাকাপয়সা খরচ করে যদি এই হয় তাহলে তো জাত যাওয়ার কথা। তার স্ত্রী হাজেরা বেগম লাল টকটকে জিহ্বা বের করে ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। কামারহাটের খোরশেদ ব্যাপারী অনেক ভালো বাবুর্চি। দশ গ্রামে তার নামডাক আছে।

পোদ্দার বাড়িতে পূজার বড় অনুষ্ঠানে তার হাতে রান্না হয়। কেউ কোনোদিন খারাপ বলেনি তার হাতের খাবার খেয়ে। আজ সব লোকজন খাবার খেয়ে কেমন কাকের মতো ঠোঁট মুছে আজগুবি মিথ্যা বলছে, তাদের নিজেদের লাভ কী এখানে?

গদা শামসু মনের আনন্দে বিয়েবাড়ি থেকে মুখের ভিতর একটা তরতাজা খিলি পান ভরে ঢিংঢাং মুডে রাস্তার দিকে এগিয়ে আসছে। ঠোঁটের কিনারে হাসি রেখে মৃদু স্বরে বলছে, হাজার মানুষের খাবারের স্বাদ আমি একাই খেয়েছি!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper