বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু      ‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস      আবারো সংঘর্ষে ঢাকা-সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা      রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ আফজালুল      গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১      গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি      মনোনয়নপত্র জমাদানে উৎসবমুখর পরিবেশ      
দেশজুড়ে
কক্সবাজার-বান্দরবানে তামাক চাষের ভয়াবহ আগ্রাসন
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: রোববার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:০৭ পিএম
ছবি : প্রতিনিধি

ছবি : প্রতিনিধি

কক্সবাজার ও বান্দরবানের অন্তত কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে চলতি শুষ্ক মৌসুমে তামাক চাষ শুরু হয়েছে।

চলতি বছর গত বছরের চেয়ে বেশি তামাক চাষে ঝুঁকেছে কৃষকগণ। যার কারণে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন ভয়ানকভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন পরিবেশ কর্মীরা। এর কারণ হিসেবে তামাক চাষে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা তাতে ঝুঁকছেন বলে মনে করছেন। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছেন চাষিরা।

চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের অন্তত ৯টি ইউনিয়নে তামাক চাষ করা হয়েছে। দেড় যুগ ধরে তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ) দাবি করেছে, কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় এই আগ্রাসন চলছে।

এদিকে কক্সবাজার জেলার পাঁচটি নদীর মধ্যে প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ বাঁকখালী ও মাতামুহুরি। আর সেই দুইটি নদীর বুকে তামাকের আগ্রাসন চলছে। যদিও এক সময় এই দুটি নদীর তীরে সবুজ শাক-সবজিতে ভরপুর থাকত।

রামু ও চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রামুতে ১৭০ হেক্টরের অধিক ও চকরিয়ায় ৬২০ হেক্টরের অধিক জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে এই দুইটি নদীর তীরে করা তামাক চাষের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।

কৃষি অফিস বলছে, এই দুই উপজেলার সেসব জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ হতো, এখন অধিকাংশ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। বাঁকখালী নদীর বুকে তামাক চাষের আগ্রাসন দেখা গেছে রামু উপজেলার রাজারকুল, মৈষকুম, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়ার নাপিতের চর, কাউয়ারখোপ, মনিরঝিল, ফাক্রিকাটা এলাকায়। যেখানে বাঁকখালী নদীর দুই তীরে শুধু তামাকের আবাদ। পাশাপাশি এলাকার ফসলি জমিগুলোও তামাকের দখলে। ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমি, বন বিভাগের সমতল ভূমিসহ বাদ যাচ্ছে না মাতামুহুরী এবং বাঁকখালী নদীর দুই তীরের খাস জমিও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উৎপাদিত তামাক শোধনের জন্য আগে থেকেই বেশ কিছু জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের পর মজুদ করার জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। আর এসব জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে উজাড় করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, কাটা পড়ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের লাখ লাখ গাছও।

এছাড়া তামাক পাতা শোধনের জন্য বাড়ির উঠান, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে নির্মিত চুল্লিগুলোও সংস্কারের কাজ চলছে। তামাক প্রক্রিয়াজাত হওয়া ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দারা জানান, যখন তামাক পাতা শোধনের কাজ শুরু হয় তখন নিকোটিনের গন্ধে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় হয়। স্বাভাবিকভাবে শ্বাসও নিতে পারে না এলাকার মানুষ। এছাড়াও শোধনের সময় জমিতে পড়ে থাকা তামাক পাতার উচ্ছিষ্ট ও তামাক গাছ (ডাটা) বর্ষা মৌসুমে নদীতে গিয়ে পড়ে। এতে নদীর পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

চকরিয়া কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তামাক আবাদ হচ্ছে ৬২০ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে বোরো ধান, রবিশস্য, রকমারি শাকসবজির উৎপাদন হচ্ছে। তবে উবিনীগ এবং কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যে ফারাক রয়েছে।

কৃষি বিভাগ মনে করে, পাঁচটি ইউনিয়নে (বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর–মানিকপুর, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী ও লক্ষ্যারচর) তামাক চাষ হচ্ছে। উবিনীগ জানায়, কৃষি বিভাগের এই জরিপে স্থান পায়নি কৈয়ারবিল, বরইতলী, খুটাখালী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন।

বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর–মানিকপুর ও কাকারা ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ জমি তামাক চাষের আওতায় রয়েছে। এই তিন ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বহমান মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ছাড়াও পাহাড়ি টিলা ও সমতল ভূমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। নদীর দুই তীরের খাস জমি এবং পাহাড়ি টিলা ও সংলগ্ন সমতল ভূমি সংরক্ষিত বনের আওতাভুক্ত।

এছাড়া সুরাজপুর–মানিকপুর ইউনিয়নের এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে তামাক চাষ হচ্ছে না। পাতা শোধনের জন্য বসতবাড়ির উঠান, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এর পাশে মজুদ করা হয়েছে কাঠের স্তূপ।

সুরাজপুরের তামাক চাষি রহিম উল্লাহ, কাকারার মাঝের ফাঁড়ির দিদারুল আলমসহ বেশ কয়েকজন জানান, চুল্লিতে কাঠ ছাড়া তামাক পোড়ানো হলে ভালো মান পাওয়া যায় না। তাই বেশি মূল্য পেতে মান নিশ্চিত করতে কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতি মৌসুমে একেকটি চুল্লিতে অন্তত ৪০ হাজার কেজি তামাক শোধন করা যায়। বিপরীতে প্রতি চুল্লিতে কাঠ পোড়াতে হয় অন্তত সাড়ে তিন লাখ কেজি। এসব কাঠ বন থেকে সংগ্রহ করা হয়।

জানা যায়, তামাক চাষে ব্যাপকহারে সার–কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আর সেই উপাদান কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে সরবরাহ দেওয়া হয়ে থাকে। এ নিয়ে তামাক চাষিদের কোনো মাথাব্যথা করতে হয় না। এতে করে প্রতিবছর ফসলি জমিতে ব্যাপকহারে সার-কীটনাশকের ব্যবহার বাড়তে থাকায় দিন দিন জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে।

সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, ২১ বছরের বেশি সময় ধরে এই ইউনিয়নে তামাক চাষ হচ্ছে। এর আগে চাষিদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম, কিন্তু তামাক কোম্পানির লোভের ফাঁদে পড়ে প্রান্তিক চাষিরা তামাক চাষ বাদ দিতে পারছে না। যদি তামাক চাষ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলেই এটা থামানো সম্ভব।

উবিনীগ কক্সবাজারের সমন্বয়ক মো. জয়নাল আবেদীন খান বলেন, তামাক চাষের কারণে যেমন জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, তেমনি চাষি এবং পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের মানুষ প্রতিবছর নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া তামাক শোধন করতে গিয়ে প্রতিবছর কক্সবাজার ও বান্দরবানের প্রায় ১০ হাজার চুল্লিতে অন্তত ১০ কোটি টাকার কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার সভাপতি এইচ এম এরশাদ জানান, তামাক চাষের কুফল ও ভয়াবহতার কথা অনুধাবন করে প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নিতে পারে সরকার।

সংরক্ষিত বনভূমিতে তামাক চাষ হওয়া নিয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার জানান, বিভিন্ন রেঞ্জের আওতাধীন যেসব সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সমতল ও টিলা শ্রেণির ভূমিতে তামাক আবাদ হচ্ছে তা অভিযানের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এছাড়াও সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে কাউকে জ্বালানিও সংগ্রহ করতে দেওয়া হবে না।

রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল জানান, তামাক চাষ বন্ধের কোনো চিঠি আমার হাতে না আসার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

কেকে/এএম
আরও সংবাদ   বিষয়:  তামাক চাষ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আগামীকাল জমা হবে জকসু নীতিমালা, আগামী সপ্তাহে বিশেষ সিন্ডিকেট
ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা অ্যাপে মিলবে মেটলাইফের বিমা সুবিধা
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষি সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তার অভিযাত্রা
ভূমি অভিযোগ গ্রহণ ও নিস্পত্তিতে নাগরিকদের মতামত জানতে হবে: সিনিয়র সচিব
‘বিচার ও সংস্কার এড়িয়ে নির্বাচন দিলে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র আসবে না’

সর্বাধিক পঠিত

গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি
মনোনয়নপত্র জমাদানে উৎসবমুখর পরিবেশ
‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস
মেঘনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close