ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামের মো. ইউনুছ আলী মাত্র পাঁচ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে দৃষ্টিশক্তি হারান। তবে দৃষ্টিহীনতা তার মনোবল ভাঙতে পারেনি। ১৯৮৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাবার অসুস্থতা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি।
অন্যের কাছ থেকে সামান্য টাকা ধার করে বাড়ির পাশে একটি ছোট মুদি দোকান চালু করেন। কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে তিনি দোকানের উন্নতি করেন। সংসারের খরচ জোগানো থেকে শুরু করে বাবার চিকিৎসা এবং তিন বোনের বিয়ে—সব দায়িত্বই সফলভাবে পালন করেন।
দোকানে পণ্য মাপার কাজ তিনি নিজেই করেন। প্রথমদিকে প্রতিবেশীদের সহায়তায় বাকির হিসাব রাখতেন, পরে এই কাজ তার সন্তান এবং নাতিরা করেন।
ইউনুছ আলীর দোকানে নারী ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। তারা নিয়মিত তার কাছ থেকে পণ্য কেনেন এবং বাকির টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করেন। ইউনুছ আলীর সংগ্রামী জীবন তার এলাকার মানুষের কাছে এক উদাহরণ।
এক প্রতিবেশী সারোয়ার মিয়া বলেন, উনি প্রায় ৩৮ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। কখনো ভিক্ষা করেননি। নিজের পরিশ্রমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আরেক ক্রেতা মনোয়ারা বেগম বলেন, তাঁর ব্যবহার খুবই ভালো। আমরা সবসময় তাঁর কাছ থেকে সদাই কিনি।
ইউনুছ আলীর মতে, মনোবল মানুষকে সবকিছু করতে শেখায়। তিনি বলেন, অন্ধ হলেও আমি কখনো হাল ছাড়িনি। নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়েছি। অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তিতে যায়, কিন্তু আমি মনে করি কাজ করলেই পথ বের হয়।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর তিনি শুধু নিজের জীবনকেই বদলে দেননি, বরং সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
কেকে/এএম