বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫,
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: আন্দোলনরত শিক্ষকরা কাজে না ফিরলে আইনি ব্যবস্থা      রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিকে তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদের      খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা      অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা      প্রবাসীরা ৬০ দিনের বেশি দেশে থাকলে ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে      এভারকেয়ারের পাশে সেনা-বিমান বাহিনীর মহড়ায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ      শীত নিয়ে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর      
দেশজুড়ে
কুষ্টিয়ায় ২১৩ ইটভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ১৭ টি
সৌরভ হোসেন, কুষ্টিয়া
প্রকাশ: বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫:৫৪ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা। যে সকল ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়,কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। যা স্থানীয় জনজীবন ও কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,জেলার ছয় উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ২১৩টি। এর মধ্যে বৈধ ছাড়পত্র নিয়ে চলানো হচ্ছে মাত্র ১৭টি। অন্য ১৯৬টি চলছে পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বৈধ ইটভাটর মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালী উপজেলায় ৯টি এবং খোকসা উপজেলায় ৪টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ২টি অটো ব্রিকস এবং বাকী ১৫টি জিগ-জ্যাগ। 

তবে কুষ্টিয়া সদর এবং মিরপুর উপজেলায় নেই কোনো বৈধ ইটভাটা। অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ১টি অটো, ৪২টি জিগ-জ্যাগ, ২৯টি ড্রাম চিমনি এবং ১২৪টি উচ্চতার পাকা ফিক্সড্ চিমনি। 

এদিকে অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ২১টি ইটভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করার কারণে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ওই সকল ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্র নিশ্চিত করেছে। 

স্থানীয়দের দাবি, সরকারি আইনে কৃষি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমপক্ষে প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন করেছে প্রভাবশালীরা। আইনের ফাঁক-ফোকর ডিঙিয়ে জেলায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা। প্রতি বছরের মতো এবারও চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে জেলায় কৃষিজমি হ্রাস ও উদ্বেগজনকভাবে কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। 

জানা গেছে, ভাটার লাইসেন্স পেতে প্রস্তাবিত আবেদন পত্রের সঙ্গে ইট তৈরিতে মাটির উৎস উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হফলনামা দাখিলের বাধ্যতামূলক শর্ত থাকলেও ভাটা মালিকদের অধিকাংশই তা মানছে না। ফলে বেআইনিভাবে কৃষিজমি ও নদী তীরের পলি মাটি কেটে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। 

কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন,ইটভাটার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষিজমি। এছাড়া দেদারছে কাঠ পুড়িয়ে উজাড় করা হচ্ছে ফলদ-বনজ সম্পদ। ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া-ছাই ফসলের ক্ষতি, পরিবেশ দূষণসহ জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে চরমভাবে। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বৈধ ভাটামালিক বলেন, ইটভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। এছাড়া কতিপয় ভাটা মালিক উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। প্রতি বছর কিছু সংখ্যক ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য কারণে তা আর এগোয়না বেশি দূর। 

পরিবেশ বিষয়ক গবেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, দেশের ১০ হাজার ইটভাটার মধ্যে ৪ হাজার অবৈধ। প্রত্যেক ভাটায় কমবেশি ৯৫ শতাংশ কাঠ পুড়ানো হয়। তাতে আমাদের দেশে বছরে ইটভাটায় ২৫০ লক্ষ মেট্রিক টন কাঠ পুড়ানো হয়। মাটির উপরিভাগে(টপ সোয়েল) বৃষ্টি, বন্যার পানি, গাছপালা পঁচার কারণে উর্বর শক্তি থাকে। সেই সাথে পরিবেশ বান্ধব অনুজীব থাকে। মাটি পুড়ানোর কারণে টপ সোয়েল টোটালি ধ্বংস করে ফেলছে। ফলে উর্বর শক্তি হারাচ্ছে। এছাড়া মাটি কাটার ফলে ওই জমি কুষি কাজ কিংবা জলাশয় কোন কাজেই আসছে না। পাশাপাশি নির্মল বায়ু দূষিত হচ্ছে। ধোঁয়ার সাথে ক্ষার ছড়াচ্ছে। মানুষের নিঃশ্বাসের ভেতরে ঢুকে ক্ষতি করছে। গাছের বেঁচে থাকার শক্তি নষ্ট হচ্ছে। সুতরাং ইট ভাটায় ব্লক ইট তৈরি এখন সময়ের দাবি। সিমেন্ট, বালু দিয়ে তৈরি এই ইট পরিবেশ বান্ধব। 

কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতি একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণে ৭৩ ইটভাটা রয়েছে। ৮ থেকে ৯টা বাদে সবাই কয়লা ব্যবহার করেন। পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, বাংলাদেশের কারো পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। যদি তাই হয় তাহলে সবাই অবৈধ। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমল থেকেই বন্ধ রয়েছে। 

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক বলেন, অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। 

তবে এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্যে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,পর্যায়ক্রমে সকল ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হবে। কবে নাগাদ এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের(ডিসি) সাথে কথা বলতে বলেন এই কর্মকর্তা।

কেকে/ এমএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হামজা-শমিতদের ম্যাচ থেকে ৪ কোটির বেশি আয় বাফুফের
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে যোগ দিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩
দশমিনায় মৎস্য মেরিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে প্রার্থনা সভা
সাভারে টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরসি'র আত্মপ্রকাশ
ফটিকছড়িতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
বিএনপি নেতার পুকুরে বিষপ্রয়োগ

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close