প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেছে শিহাব আহমেদ শিশু বিকাশ একাডেমি, যা লালমনিরহাট জেলায় এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তুরস্ক প্রবাসী তরুণ উদ্যোক্তা শিহাব আহমেদ প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার ভিত্তি বিনামূল্যে মজবুত করতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে।
দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবার অধ্যুষিত লালমনিরহাটের তিস্তা-ধরলা ও সানিয়াজান নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে পরিবেশগত সুযোগ-সুবিধার অভাবে বহু শিশুই শৈশবে ঝরে যায় বা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এই বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ‘শিহাব আহমেদ ফাউন্ডেশন’ প্রথম ধাপে জেলার পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় ২২৫টি শিশু বিকাশ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছে। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এসব কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শিহাব আহমেদ।
এই একাডেমিগুলোতে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাঠদানের সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে দক্ষ শিক্ষিকা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা শিশুদের মানসিক বিকাশের উপর জোর দিয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাঠদান করছেন। প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, কবিতা আবৃত্তি ও গান-বাজনার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা জীবনকে আনন্দময় করে তোলা হচ্ছে। শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাউপকরণ, খেলার সামগ্রী ও বাদ্যযন্ত্রও সরবরাহ করা হয়েছে।
শিক্ষিকা আফরোজা আক্তার বলেন, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি এবং সম্মানজনক সম্মানী পাচ্ছি। খেলাধুলার মতো বিনোদনের মাধ্যমে শিশুদের পড়িয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
অভিভাবক মর্জিনা বেগম এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা গরিব মানুষ, সন্তানদের খেলার জিনিস কিনে দিতে পারি না। এই একাডেমিতে বিনামূল্যে এমন সুযোগ পেয়েছি। এটা কর্মজীবী মায়েদের জন্যেও দারুণ সুবিধা। এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
শুধু শিশুদের শিক্ষাই নয়, শিহাব আহমেদ ফাউন্ডেশন স্থানীয় যুব সমাজকে স্বাবলম্বী করতেও ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধায় স্থাপন করা হয়েছে দুটি শিহাব আহমেদ টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এবং শিহাব আহমেদ আইটি একাডেমি। টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট যুবক-যুবতীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে। এমনকি আইটি একাডেমিতে শিক্ষিত বেকার যুবকরা ফ্রিল্যান্সিং শিখে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ খুঁজে পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫১০ জনকে আইটি সেক্টরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে ফাউন্ডেশন।
এছাড়াও, অবহেলিত এই দুই উপজেলার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চালু করা হয়েছে দুটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল। প্রতিটি ইউনিয়নে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজনের জন্য একজন নারী ও একজন পুরুষ চিকিৎসকসহ নার্সদের সমন্বয়ে একটি দক্ষ টিম কাজ করছে।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শিহাব আহমেদ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধারই সন্তান। সবজি বিক্রি ও রিকশা চালিয়ে কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি শিক্ষা জীবন শেষ করেন। পরে তুরস্কে পাড়ি জমান এবং দীর্ঘ ১০ বছর ব্যবসায়িক সাফল্যের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
শিহাব আহমেদ জানান, আমি চাই না আমার মতো কোনো শিশুকে কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হোক। তাই শিক্ষা ও যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তি করতে কাজ করছি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধায় ৬০ হাজার শিশুকে নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটি সফল হলে গোটা দেশে এই মডেল ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
কেকে/ এমএস